ভৈরবে সংঘর্ষ
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৩২ পিএম
ভৈরবে টানা তিন দিনের সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িছাড়া প্রায় ৫ হাজার নারী-পুরুষ। এরপরও থেমে নেই নাশকতা। থেমে থেমে চলছে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। সরেজমিনে দেখা মেলে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন।
দীর্ঘ ৫৪ বছর যাবৎ চলমান রয়েছে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা তোফাজ্জলের নেতৃত্বাধীন কর্তাবাড়ি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাফায়েত উল্লাহর নেতৃত্বাধীন সরকার বাড়ির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। গত ৩১ অক্টোবর সংঘর্ষে কাইয়ুম মিয়া নামে একজন নিহত হন। আহত হয় অর্ধশতাধিক। দুদিনে উভয় পক্ষের ৯ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র। দুই বংশের এই সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িছাড়া দুই বংশের প্রায় পাঁচ হাজার নারী ও পুরুষ।
মৌটুপি এলাকার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। দুদিন আগেও যেখানে ঘর ছিল, আজ সেখানে কোনো ঘর নেই, আছে শুধু ভিটাখানি। কারও খড়ের গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, আবার কারও বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে গরু-বাছুর, ছাগল, হাঁস-মুরগি, আসবাবপত্রসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। এমনকি পাকাঘরের দরজা, জানালার গ্রিল ও আসবাবপত্র সবকিছুই নিয়ে গেছে উভয় পক্ষের লোকজনের। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা বয়োজ্যেষ্ঠ নুরজাহান বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। আমারও সমস্যা। কিছু মানুষ এসে বলে বাড়ি থেকে বের হও। না হলে আগুন লাগিয়ে দেব। অসুস্থ স্বামীকে রেখে কোথায় যাব, মরতে হলে বাড়িতে পড়েই মরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নারী বলেন, বাড়িতে থাকতে আমাদের কিছু মানুষকে টাকা দিতে হচ্ছে। আমাদের বাড়ি-ঘরসহ পানি খাওয়ার টিউবওয়েলসহ বাথরুমও ভেঙে ফেলেছে। কিছু বাড়িতে চালা আছে টিন নেই। বিল্ডিং বাড়িতে ছাদও নেই। আমাদের সহযোগিতা করার কোনো মানুষ নেই। সারা রাত জেগে থাকি কখন জানি কী হয়। কেউ আগুন লাগাচ্ছে, কেউ আবার লুটপাট করছে।
ভৈরব থানার ওসি মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যৌথ অভিযানে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যৌথ অভিযান ও পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।