হাসিব আল আমিন, নোয়াখালী
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪১ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩২ পিএম
পারিবারিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ছালো উদ্দিন। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় তার ছয়টি পুকুর ও দুটি ঘের ভেসে গেছে। এতে তার ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মাছের শোক আর ঋণের চাপে এখন তিনি দিশাহারা। ছালো উদ্দিন নোয়াখালী সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নের দানামিয়ার বাজার এলাকার মৃত বজু মিয়ার ছেলে।
এদিকে বন্যায় বেসরকারি চাকরিজীবী জসিম উদ্দিনের প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে তার দাবি। চাকরির সঞ্চয় থেকে পুকুর ও ঘের লিজ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন তার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায় ৮৫ হাজার পুকুর-ঘেরের মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলা।
মৎস্যচাষি ছালো উদ্দিন বলেন, পৈতৃকভাবে আমরা সবাই জেলে পেশায় জড়িত। আমরা বছরজুড়ে মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করি। সন্তানদের না খাইয়ে আমি মাছকে খাবার দিতাম। সারা দিন মাছ নিয়েই পড়ে থাকতাম। যখন পানি উঠেছে, তখন ১২ ফুটের নেট দিয়েছি। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয় নাই। সন্তানদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছি। আমার ছয়টা পুকুর ও দুটি ঘের ভেসে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।
বেসরকারি চাকরিজীবী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাকরির সঞ্চয় থেকে তিনটি পুকুর লিজ নিই। তার পর মাছ চাষ করি। নতুন মানুষ হিসেবে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কখনও এত পানি আগে কেউ দেখেনি। এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। নিজের সঞ্চয় ও ঋণে এখন পথের ফকির হয়ে গেছি।’
জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার চাষি ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে আবেদন করেছেন। মাঠপর্যায়ে আমরা পরিদর্শনে গিয়ে এখনও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখেছি। পুকুর যে মাছশূন্য, তা টের পাওয়া যাচ্ছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বন্যায় প্রায় ৮৫ হাজার পুকুর-ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি বরাদ্দ এখনও আসেনি। তবে আমাদের প্রান্তিক চাষিদের জন্য পোনামাছ অবমুক্ত কর্মসূচি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব কর্মসূচি পালন করছি। সরকারি বরাদ্দ পেলে চাষিদের পুনর্বাসনে কাজ করব।