হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৩ পিএম
টাঙ্গাইল হোমিও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সাহিদা আক্তার ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠুসহ চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ২৩ অক্টোবর ওই চার শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারীদের বক্তব্যÑ অধ্যক্ষের সিন্ডিকেটে যেন বন্দি হোমিও মেডিকেল কলেজ।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যক্ষ ডা. সাহিদা আক্তার ও তার স্বামী সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাদৎ হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জল।
শিক্ষক ডা. হারুনুর রশিদ, ডা. তাসলিমা খন্দকার, ডা. জাকির হোসেন, ডা. জহিরুল ইসলাম. ডা. রোকনুজ্জামান, ডা. ফজলুল করিম, ডা. আহাদ খান, ডা. গোলাম মোস্তফা এলাহী প্রদত্ত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ডা. সাহিদা আক্তার ২০০৭ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। এরপর অবৈধ প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি নিয়ে প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যাপক হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানে তার অপকর্মে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন স্বামী সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাদৎ হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জল। এদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন অধ্যক্ষ সিন্ডিকেট। কলেজের আর্থিক হিসাবে গরমিলসহ নিজেদের নানা অপকর্ম আড়াল করতে বিভিন্ন অজুহাতে অন্য শিক্ষকদের চাপে রাখেন ডা. সাহিদা। রয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের অভিযোগও।
আরও জানা যায়, ডা. সাহিদার অন্যতম সহযোগী ডা. শাহাদৎ হোসেন। তিনিও নিয়ম ভেঙে অফিস সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে ডা. সাহিদার আশ্রয়ে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চুক্তিভিত্তিক বহাল রয়েছেন। ২০০৬ সালে গভর্নিং বডির সভায় শাহাদৎকে অফিস সহকারী/ক্যাশিয়ার থেকে প্রভাষক করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বোর্ডের রেজুলেশন অনুসারে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। পরে তথ্য গোপন করে ২০০৯ সালে প্রভাষক পদে বোর্ড থেকে অনুমোদন নেয়। এরপর ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রভাষকদের বঞ্চিত করে ২০০৯ সালে অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হন।
এদিকে ডা. সাহিদার স্বামী হওয়ায় ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তিনি নিজেই পদোন্নতি নিয়েছেন। তার ১৯৬৯ সালে জন্ম, কিন্তু এসএসসি পাস করেছেন ১৯৮৩ সালে। আবার এসএসসি পাস ১৯৮৩ সালে হলে ডিএইচএমএসে ভর্তি হয়েছেন ১৯৮২ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে ডিএইচএমএস পাস। এসব তথ্য নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
ডা. তোফাজ্জলের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ নিয়ে এই কলেজে বহাল থেকে অন্য কলেজের জন্য কাজ করেন। অন্যদিকে এসএসসি ও ডিএইচএমএস পাস করেই কীভাবে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ পেলেন তা তদন্তের দাবি শিক্ষকদের।
অভিযোগকারী একাধিক শিক্ষক জানান, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে অভিযোগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে রয়েছে শিক্ষকদের পদোন্নতি, টাইম-স্কেল, ইনক্রিমেন্টসহ ন্যায্য পাওনা ও সুষম বণ্টন। এক্সটেনশন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ ডা. শাহাদতের প্রভাষক পদে নিয়োগ তদন্ত করা। ডা. সাহিদার অধ্যক্ষ পদে সরাসরি নিয়োগ, ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠুর নিয়োগ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা। কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাই-বাছাই করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা।
অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ এখনও আসেনি। আমার কাছে এলে আপনি আসবেন, সরাসরি কথা হবে।’
ডা. সাহিদা আক্তার ও ডা. তোফাজ্জলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন ব্যস্ত পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডা. শাহাদৎ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এএম জহিরুল হায়াত বলেন, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগপত্রটি জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’