হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় নিজ বাগানে হিমেল আহমেদ। প্রবা ফটো
টাঙ্গাইলের যুবক হিমেল আহমেদ। শৈশবেই ভালোবাসতেন কৃষিকাজ। স্বপ্ন দেখতেন নিজের একটি খামার হবে। সেই স্বপ্ন বুকে নিয়ে ২০২০ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর অন্য সবার মতো ছোটেন সরকারি চাকরির পেছনে। কিন্তু বিধিবাম, আপ্রাণ চেষ্টার পরও কোনো চাকরি জোটেনি হিমেলের কপালে। অবশেষে বাড়ি ফিরে শৈশবের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটেন। সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে গিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। আর সেই সিদ্ধান্তেই জীবনের চাকা ঘুরে গেছে হিমেলের। নিজেই তৈরি করেছেন অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান। তার স্বপ্নের প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ‘হিমেল অ্যাগ্রো ফার্ম’।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নের বেইলা গ্রামের জোয়াহের আলীর ছেলে হিমেল আহমেদ। ছাত্রজীবন থেকেই গাছের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিল হিমেলের। বিভিন্ন ফলদ গাছ কিনে প্রিয় মানুষদের উপহার দিতেন তিনি। নিজেও সংগ্রহ করতেন এসব গাছের চারা। শৈশবের ভালোবাসাই যে তাকে প্রতিষ্ঠিত করবে তা কে জানত।
হিমেলের ফলবাগানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বেইলা গ্রামে প্রায় ২৮ বিঘা জমিতে কৃষি প্রকল্প গড়ে তুলেছেন হিমেল। সেখানে রয়েছে ড্রাগন, কলা, লেবু ও টপলেডি জাতের পেঁপে। বাগানের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা এবং ছাদে রয়েছে নানা ধরনের ফলদ বৃক্ষ।
হিমেল আহমেদ বলেন, আমি ২০২০ সালে মাস্টার্স শেষ করার পর বিভিন্ন জায়গায় চাকরি জন্য খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু চকরি না পেয়ে করোনা মহামারির সময় বাড়িতে চলে আসি। এরপর উদ্যোগ নিই কৃষি প্রজেক্ট করার। ছোটবেলা থেকে কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। আর সেই চিন্তা ও আগ্রহ থেকে কৃষির সঙ্গে পথচলা শুরু করি। প্রথমে শখের বশে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে একটি ড্রাগন গাছ লাগাই। সেই গাছে ভালো ফল আসে, তারপর আরও একশ ড্রাগন গাছ লাগাই। এ গাছগুলোর ফল থেকে ভালো দামও পেয়েছিলাম। ড্রাগন ফলে লাভের পরিমাণ ভালো পাওয়াতে পরবর্তীতে আরও ১ হাজার ৫০০ ড্রাগনের গাছ লাগাই। বর্তমানে ৯ একর জমিতে বাণিজ্যকভাবে ড্রাগনসহ অন্যান্য ফলের বাগান করেছি। বাগানে বর্তমানে ড্রাগনের পাশাপাশি কলা, পেঁপে ও লেবুবাগানও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাগানে এ বছরই প্রথম ড্রাগন ফল ধরেছে। ১ হাজার ৫০০ ড্রাগন গাছে মোট খরচ হয়েছে ১৭ লাখ টাকার মতো। ইতোমধ্যে ফল বিক্রি করে খরচের টাকা উঠে গেছে। বাগান থেকে আরও ৩-৪ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারব। এ ফল বিক্রিতেও কোনো ভোগান্তি ও ঝামেলা নেই। বাগান থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। বাগানে প্রতিদিন ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করে। আমার চাকরির প্রতি আর এখন মোহ নেই। চাকরির থেকে ভালো টাকা পাচ্ছি। এখন নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। এখানে প্রতিদিনই আমার বাগান দেখতে বিভিন্ন জেলার লোক আসে। অনেকেই এমন বাগান করতে চায়। আমিও তাদের পরামর্শ দিই। যারা শখের বসে বাগান করতে চান, তাদের দুয়েকটি করে ড্রাগনগাছ ফ্রি দিই। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
হিমেলের বাগান দেখতে আসা ফরিদ মিয়া বলেন, হিমেলের বাগান দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। হিমেল এই এলাকার পরিচিত একজন কৃষি উদ্যোক্তা। যদি কৃষি অফিস পরামর্শ ও সহযোগিতা করে তাহলে আমারও একটি বাগান করার পরিকল্পনা আছে।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, হিমেল একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন। যদি কেউ এমন বাগান করতে চায়, তবে কৃষি বিভাগ থেকে আমরা পরামর্শ ও সহায়তা করব।