ছাত্র আন্দোলনে আহত
জুয়েল সাহা বিকাশ, ভোলা
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১২ এএম
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:২৬ পিএম
আবুল খায়ের, মো. খোকন ও মো. নুর হোসেন। ছবি : কোলাজ/প্রবা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত তারা তিনজন। তিনজনের বাড়িই ভোলা জেলায়। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আহত হয়ে কাজে যোগ দিতে না পারায় চাকরি হারিয়েছেন স্বপ্ন সুপার শপের এরিয়া সুপার ভাইজার আবুল খায়ের ও পাঞ্জাবি কারখানার সেলাই শ্রমিক মো. খোকন। অসুস্থ অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকায় কাজ করার শক্তি নেই ভ্যানচালক নুর হোসেনের। তাদের পরিবার ধারদেনা করে কিছুটা চিকিৎসা করালেও টাকার অভাবে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা। আহতদের পরিবারের দাবি সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে তারা।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মানিকা ইউনিয়নের দক্ষিণ আইচা এলাকার হাওলাদার বাড়ির কেরামত আলীর ছেলে আবুল খায়ের। চট্টগ্রামের খুলশীতে স্বপ্ন সুপার শপের এরিয়া সুপার ভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট বিকালের দিকে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল। ওই সময় চট্টগ্রামের গোলপাহার মোড় থেকে কাজ শেষে খুলশীতে যাওয়ার সময় ওয়াসা মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। তার পেটে দুটি, কাঁধে একটি ও বাম পায়ে একটিসহ মোট ৪টি গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকাবস্থায় ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবারের কাছে খবর দেয়।
তিনি বলেন, ধারদেনা করে আমার পরিবার চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত আমার ৪টি অপারেশন হয়েছে। এতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনও ২টি অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু আর্থিক সংকটে করাতে পারছি না। ওষুধের খরচ নিয়েও দুশ্চিতায় দিন কাটে। সরকারের কাছে আবেদন, আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।
আবুল খায়েরের বাবা কেরামত আলী বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আন্দোলন চলাকালে কাজ শেষে ফেরার পথে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমার বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। আবুল খায়ের ও তার ছোট ভাইয়ের চাকরির আয়ে চলে আমাদের সংসার, ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনা। আবুল খায়েরের আয় না থাকায় কষ্টে চলছে সংসার। ছেলের ওষুধের খরচ জোগাতেও সমস্যা হচ্ছে। অনেক টাকা ধারদোন করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। ডাক্তাররা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে। এজন্য সরকারি সহযোগিতার দাবি করছি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের জিন্নানগর গ্রামের নুর হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভ্যান চালিয়ে ফেরার পথে বোমাসদৃশ্য কিছু একটা এসে শরীরে লাগে। এতে আমার বাম হাত ও দুই পা ঝলসে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পরিবারকে খবর দেয়। অপারেশনের পর আমার বাম হাতের কব্জি কেটে ফেলা হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে রয়েছি। ঠিকমতো হাঁটা-চলাফেরা করতে পারছি না। পরিবারের সদস্যরা গ্রামের লোকজন থেকে ধারদেনা করে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করেছে চিকিৎসায়। বর্তমানে ওষুধ খরচ জোগাতে পারছি না। টাকার অভাবে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে। বন্ধ হয়ে গেছে দুই সন্তানের পড়াশোনা। আমি আবার কাজে ফিরতে চাই। এজন্য প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের মো. খোকন। রাজধানী ঢাকার যাত্রাড়ীতে একটি কারখানায় পঞ্জাবি সেলাইয়ের কাজ করতেন।
খোকন বলেন, গত ৪ আগস্ট বিকালে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হই। দুই পায়ের বিভিন্ন অংশে ৭৫টি গুলি লাগে। রিকশাচালক বাবা ও বড় ভাই ধারদেনা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে অপারেশন করিয়ে ৪৩টি গুলি বের করালেও এখনও ৩২টি রয়েছে দুই পায়ে। টাকার অভাবে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা। অসুস্থ থাকায় চাকরিও হারিয়েছি। আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, আমরা আহতদের একটি প্রাথমিক তালিকা করেছি। সরকারি নির্দেশনা পেলে যাচাই করে আহতদের চূড়ান্ত তালিকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।