কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৪৪ পিএম
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ২২:১১ পিএম
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। প্রবা ফটো
দিনদুপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গ্রামে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র্যাবের টহল রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ছাতারপাড়া গ্রাম ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালে জানারুল ইসলাম নামে বিএনপি সমর্থক পিয়াদা বংশের এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পিয়াদারা এই মৃত্যুর জন্য গাইনদের দায়ী করেন। তবে গাইনরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি ছিল অসুস্থতার কারণে জানারুলের মৃত্যু হয়। সেসময় এ ঘটনায় পিয়াদারা গাইনদের আসামি করে মামলা দায়ের করলেও আসামিরা আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় ওই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, তিন বছর ধরে এই ক্ষোভ মনে পুষে রেখেছিলেন পিয়াদারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গাইনরা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে দুই ভাইকে বুধবার ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পিয়াদা বংশের লোকজন। স্থানীয়রা বলছেন, দুই বংশের মধ্যে এই রেষারেষি চলে আসছে প্রায় দুই যুগ ধরে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পিয়াদাদের দাপটে গ্রামছাড়া হন গাইন বংশের অনেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৫ বছর ধরে গাইনদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে পিয়াদা বংশের লোকেরা।
নিহতদের বড় ভাই রেজাউল ইসলাম বলেন, যারা এই হামলা করেছে তাদের সঙ্গে আমাদের বংশগত বিরোধ ছিল। হত্যাকাণ্ডটি দলীয় কোনো ইস্যুতে হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানারুলের মুত্যৃর ঘটনার পর থেকেই মূলত পিয়াদাদের সঙ্গে তাদের বিবাদ বৃদ্ধি পায়।
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, মিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক, দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আওয়াল কবীরসহ পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে পূর্বশত্রুতার জেরেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যায় রাজনৈতিক ইস্যু আছে কি না, তাও দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।
বুধবার বিকালের এ ঘটনায় দুজনের প্রাণহানি ছাড়াও আহত হন চারজন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ বৃহস্পতিবার বিকালে দাফন করা হয়েছে।