চম্পক কুমার, জয়পুরহাট
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫২ পিএম
জয়পুরহাটের সার্বজনীন কেন্দ্রীয় শিবমন্দির প্রঙ্গণে বুধবার ১একটু সুখের বাজারে চলছে কেনাবেচা। প্রবা ফটো
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব শাকসবজির বাজারেও। কোথাও যেন স্বস্তি নেই। ক্রেতাদের সুবিধা ও স্বস্তির জন্য ভিন্নধর্মী উদ্যোগের দেখা মিলল জয়পুরহাট জেলা শহরের সার্বজনীন কেন্দ্রীয় শিব মন্দির প্রাঙ্গণে। যেখানে বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজি। যে কারণে এই বাজারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘একটু সুখের বাজার’।
শহরের ব্যবসায়ী রাজ কুমার খেতান নিজ উদ্যোগে এই বাজার চালু করেছেন। কেন্দ্রীয় শিব মন্দির কমিটির লোকজন সহায়তা করছেন বাজার পরিচালনায়। গত ২৭ অক্টোবর থেকে এই বাজারে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ চাহিদা অনুসারে কাঁচা তরিতরকারি অর্ধেক দামে কিনতে পারছে। প্রতিদিন দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই বাজার।
রাজ কুমার খেতান জয়পুরহাট জেলা শহরের বাসিন্দা। নিজেকে আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন। জয়পুরহাটে কাঁচাবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্দেশ্যে তিনি ভর্তুকি দিয়ে এই বাজার স্থাপন করেছেন। যা আগামী রমজান মাস পর্যন্ত চালু রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সার্বজনীন কেন্দ্রীয় শিব মন্দির প্রাঙ্গণে প্রায় সব ধরনের সবজি সাজিয়ে রাখা। স্বেচ্ছাসেবীরা মন্দির প্রাঙ্গণেই এসব সবজি আলাদা-আলাদা স্থানে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুপুরের পর থেকেই লোকজন জড়ো হচ্ছিল। ঘড়িতে আড়াইটা বাজলে শুরু হয় বিক্রি। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের সবজি কেনার ধুম পড়ে। তরিতরকারির মধ্যে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৯০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, পেঁপে ১০ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ২০ টাকা, কাঁচা কলা ১০ টাকা হালি, একটি করে ছাচি লাউ ১০ টাকা ও একটি করে মিষ্টি লাউ ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল।
সদরের পুরানাপৈল এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, ‘বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা আলুর কেজি। কিন্তু এখানে ৩০ টাকা কেজি। বাজারে সব সবজির দাম বেশি, কিন্তু এখানে অর্ধেক দামে কেনাকাটা করে সাশ্রয় হচ্ছে।’
আবু ইউসুফ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এখানে বাজারের অর্ধেক দামে সবজি পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনে কিনতে পারব কি নাÑ এমন চিন্তায় পড়তে হয়। কিন্তু এই বাজারে তুলনামূলক অনেক কম দামে সবজি পাচ্ছি।’
বাজারের স্বেচ্ছাসেবী অঙ্কিতা কুণ্ডু শিবানী বলেন, ‘রাজ কুমার খেতান নিজ উদ্যোগে এ কাজ করছেন। এখানে কম টাকা দিয়ে সবজি কেনাকাটা করা যাচ্ছে। ক্রেতারা যেন সহজেই কেনাকাটা করতে পারে এজন্য আমরা খুশিতে এখানে সাহায্য করছি।’
ভতুর্কি মূল্যে একটু সুখের বাজারের উদ্যোক্তা রাজ কুমার খেতান বলেন, ‘শহরের বাজারগুলোয় শাকসবজির দাম অনেক বেশি। সিন্ডিকেট করেই বাজারে তরিতরকারির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টাই করছি। আগামী রমজান মাস পর্যন্ত চালু রাখার ইচ্ছা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক ক্রেতা এসে কেনাকাটা করেন। প্রথম দিন প্রায় সাতশ মানুষ বাজার করেছেন। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। একটু সুখের বাজারে সবাই আনন্দের সঙ্গে বাজার করছে। এটা দেখে ভালো লাগছে।’