তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০৬ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ২০:১৭ পিএম
যশোরের অজপাড়াগাঁয়ের ওয়াহিদ সর্দার সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় গাছ লাগান ও পরিচর্যা করে সুখ-আনন্দ অনুভব করেন। স্কুলে স্কুলে গিয়ে এবং ভালোবাসা দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গাছের চারা বিতরণ করেন। সম্প্রতি জেলার গণ্ডি পেরিয়ে অন্য জেলায়ও রোপণ করছেন গাছের চারা।
শুধু তা-ই নয়, তিনি রাস্তার দুইধারে গাছে গাছে
সাঁটানো রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন, ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপনযুক্ত ব্যানারের পেরেক
তুলে ‘গাছের ব্যথা’ দূর করেন। বিভিন্ন সময় রাস্তার দুইধারের মৃত গাছের পোস্টমর্টেমেরও
দাবি করেন গাছপ্রেমী ওয়াহিদ। গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। ওয়াহিদ
বলেন, তিনি দেশের সবখানেই গাছ রোপণ করে সবুজ ছড়িয়ে দিতে চান। একই সঙ্গে গাছ ও প্রকৃতির
প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের আহ্বান জানান এই গাছপ্রেমী। মানুষও তার এই উদ্যোগকে স্বাগত
জানায়।
যশোরের ভাতুরিয়া এলাকার রবীন্দ্র সরকার বলেন,
ওয়াহিদ একজন রাজমিস্ত্রি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার। রাস্তার ধারে গাছ রোপণ ও গাছ
থেকে পেরেকযুক্ত সাইনবোর্ড অপসারণ নিয়ে এলাকার লোকজন প্রথমদিকে হাসাহাসি করত। তারপর
তিনি যখন গাছে পেরেক মারার ক্ষতির বিষয়ে বোঝান তখন মানুষ তাকে বাহবা দেয়।
এই কাজের জন্য এলাকাবাসী তাকে বলেন, গাছদরদি,
গাছবন্ধু। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওয়াহিদ সর্দার। নিজের কাজের ফাঁকে তিনি শাবল ও বাইসাইকেল
নিয়ে বেরিয়ে পড়েন যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল গ্রামের বাড়ি থেকে। তার সাইকেলের সামনে
একটি সাইনবোর্ড বাঁধা থাকে। সেখানে গাছে পেরেক মারার ক্ষতি বিষয়ে সতর্কবার্তা লেখা
আছে।
ওয়াহিদ বলেন, গাছের সঙ্গে তার সখ্য শিশুকাল
থেকে। তবে চারা রোপণের শুরুটা ২০০৬ সালে যশোর সদরসহ নানা জায়গায় লাগানোর মাধ্যমে। এ
পর্যন্ত ২৫ হাজারের অধিক গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারের মতো গাছ বেঁচে আছে।
স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু কৃষি
পুরস্কার পেয়েছেন ওয়াহিদ। এ পুরস্কার তাকে অনুপ্রাণিত করে বলে তিনি জানান।
এই বৃক্ষপ্রেমী বলেন, গাছ নিরাপত্তাহীনতায়
রয়েছেÑ এমন অনুভূতি থেকে তিনি গাছের পেরেক অপসারণে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
আশ্বাস দিলেও প্রশাসন কাজটি না করায় নিজেই ২০১৮ সালের ৪ জুলাই বেরিয়ে পড়েন গাছকে যন্ত্রণা
থেকে রক্ষার অভিযানে। আর সেই থেকে চলছে তার বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ থেকে পেরেক অপসারণের
নিরন্তর কর্মসূচি। বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষের নিরাপত্তা রক্ষা তার এখন নেশায় পরিণত হয়েছে
বলে তিনি জানান।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারমত্রাপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন,
সুদূর যশোর থেকে এসে ঝিনাইদহের অজপাড়াগাঁয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ
করায় আমরা আবেগাপ্লুত। ওয়াহিদ সরকারের হাত দিয়ে পৃথিবীটা সুশোভনীয় হোক। তার সুস্বাস্থ্য
কামনা করি।
‘আসলে তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। একজন রাজমিস্ত্রি হয়েও,
নানা সংকটে থাকার পরও জেলা ও জেলার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ ও চারা বিতরণ
করে যাচ্ছেন ওয়াহিদ। তিনি চাইলে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে’, বললেন যশোর জেলা পরিষদের
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।