বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৭ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫০ পিএম
প্রান্তিক পর্যায়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় তিনটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (হাসপাতাল) নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে দুটি হাসপাতালই পাশাপাশি গ্রামে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুই প্রভাবশালী সাবেক সচিব প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল দুটি নির্মাণ করেন। দুই সচিবের ইচ্ছায় হাসপাতাল নির্মাণের সাত বছর পার হলেও সেখানে কোনো চিকিৎসকের পদায়ন হয়নি।
কয়েকজন কর্মচারী দিয়ে চলছে প্রাথমিক সেবা কার্যক্রম।কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল বানানোর পরও সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। অপরদিকে ব্যবহার না করায় অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কায়না গ্রামে
সাবেক এমপি রুহুল আমিন হাওলাদারের বাড়ির সামনে কায়না ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র,
২০১৮ সালে বগা ইউনিয়নের সাবুপুরা গ্রামে স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবদুল মালেক
মিয়ার বাড়ির সামনে সাবুপুরা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ও ২০২২ সালে
কালিশুরী ইউনিয়নে রাজাপুর ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে তিনতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন
ও চিকিৎসক কর্মচারীর আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। তিনটি হাসপাতালের
মধ্যে সাবুপুরা ও কায়না গ্রামের হাসপাতাল দুটির মধ্যে দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন তার বেয়াই সাবেক
এমপির বাড়ির সামনে ১০ শয্যার এ হাসপাতাল নির্মাণ করেন। তার পাশের সাবুপুরা গ্রামের
হাসপাতাল নির্মাণ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবদুল মালেক। পাশাপাশি গ্রামে
এমন দুটি হাসপাতাল নির্মাণ দুই সচিবের বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না বলে দাবি স্থানীয়দের।
এদিকে হাসপাতাল দুটি নির্মাণের সাত বছর পার হলেও কোনো গাইনি ও শিশু
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগদান করেননি। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এসব হাসপাতালে
কোনো সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। চিকিৎসক না থাকায় নিষ্প্রাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতাল
দুটি। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা ও ফার্মাস্টি দিয়ে কোনো রকম চলছে সেবা কার্যক্রম।
ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া তেমন কেনো সেবাই পাচ্ছে না রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কায়না গ্রামে তিনতলা হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনে যাতায়াতের
আলাদা কোনো সড়ক নেই। সাবেক এমপির বাড়ির সড়ক দিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। সেটিও কাঁচা সড়ক।
বর্ষা মৌসুমে যা সম্পূর্ণ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে থাকে। ব্যবহার না করায় অযত্ন অবহেলায়
১০ শয্যার বেড নষ্ট হয়েছে। একই অবস্থা হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ
যন্ত্রপাতির।
সাবেক সচিব মালেক মিয়ার বাড়ির সামনের সাবুপুরা মা ও শিশু হাসপাতালটির
অবস্থাও একইরকম। একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও দুজন কর্মচারী দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
চলছে। অধিকাংশ সময় থাকে শুনশান নীরবতা। হাসপাতালে অলস সময় কাটে কর্মরত কর্মচারীদের।
এমনই করুণ অবস্থা কালিশুরীর রাজাপুর ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এসব হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় কোনো প্রসূতি
ও শিশুর চিকিৎসা হয় না। গ্রামের হাতে গোনা কিছু মানুষ জ্বর-সর্দি, গর্ভনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
ও গর্ভকালীন পরামর্শ নিতে আসে।
সাবুপুর ও কায়না হাসপাতালের এফডব্লিউভি সালমা ইয়াসমিন ও শারমিন জাহান
অভিন্নভাবে জানান, গর্ভবতী মায়েদের প্রাথমিক সকল সেবা আমরা দিয়ে থাকি। নরমাল ডেলিভারিও
এখানে হয়। তবে চিকিৎসক না থাকায় জটিল চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।
সাবুপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন ও কায়না গ্রামের বাসিন্দা
সুরাইয়া আক্তার নিশা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চিকিৎসকবিহীন হাসপাতালের কোনো প্রয়োজন
নেই। অহেতুক রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এখন হাসপাতালের মূল্যবান জিনিসপত্র
ব্যবহার না করায় অবহেলা-অযত্নে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সানজিদা ইসলাম
বলেন, ‘১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে লোকবল সংকটের কারণে
সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসকসহ লোকবলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠানো
হয়েছে।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘চিকিৎসক পদায়ন বা নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখভাল করে। চিকিৎসকসহ জনবলের জন্য একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। সামনের বিসিএসে হয়তো চিকিৎসক নিয়োগ হবে।’