রাজশাহীর হাইটেক পার্ক
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩৪ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩৭ পিএম
রাজশাহী নগরীর অদূরে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পদ্মার তীরে ৩১ একর জমিতে অবস্থিত হাইটেক পার্ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৪৩ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তবে আশানুরূপ সাড়া ফেলতে পারেনি হাইটেক পার্ক। এর মাঝে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারী ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে।
গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে অবস্থিত হাইটেক পার্ক লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীসহ তাদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মীরা। ফলে দক্ষ জনবল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানটি চালুর শুরুতেই হোঁচট খেল। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে হাইটেক পার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নতুন বিনিয়োগকারী আনতে পারলে আইটি সেক্টরে রাজশাহীর ১৬ হাজার দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ালমার্ট ও অ্যামাজানের মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ম্যানেজ করা হয় এবং মিডলইস্ট ও ইউরোপের নানা প্রতিষ্ঠানের জন্য সফটওয়্যার প্রস্তুত হয় রাজশাহীর হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে। যেখানে বর্তমানে কাজ করছেন প্রযুক্তিতে দক্ষ রাজশাহীর ৪ শতাধিক তরুণ-তরুণী।
বিজনেস অটোমেশনের অ্যাডমিন মো. জাহিদ বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রতিষ্ঠানটির ৩৮ লাখ টাকার কম্পিউটারসহ আইটি ডিভাইস চোখের সামনে লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এখনও বহিরাগতরা প্রতিষ্ঠানে যখন তখন ঢুকে পড়ছে। কর্মীরা এখনও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তা ছাড়া এখানে লিফট, টয়লেট, পানি প্রভৃতির সংকট রয়েছে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামোসহ অফিস স্পেস ভাড়া দিয়ে থাকেন। এখানে বিজনেস অটোমেশনের মতো আরও ৩টি প্রতিষ্ঠান প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। ওইসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ একই কায়দায় লুট করা হয়েছে। এমন অবস্থায় সংকটে বিনিয়োগকারী, শঙ্কায় কর্মসংস্থান। নেত্র সিস্টেমস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও তরুণ উদ্যোক্তা আশিক মুহাম্মদ বলেন, আমার প্রায় ২৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল। ওই দিনের ঘটনায় সব লুট হয়ে গেছে। আমাদের তৈরিকৃত সফটওয়্যারের দাম হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা।
হাইটেক পার্ক এলাকা দুটি ভাগে বিভক্ত, যার একটি সিলিকন টাওয়ার এবং অপরটি ও আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। হাইটেক পার্কের বরাদ্দযোগ্য স্পেসের আয়তন প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৮৩১ বর্গফুট। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, এখানে ফাঁকা রয়েছে মাত্র ২ হাজার ১২০ বর্গফুট জায়গা। সিলিকন টাওয়ার থেকে মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা।
অপর দিকে আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে বরাদ্দযোগ্য স্পেসের আয়তন ১৭ হাজার বর্গফুট। এই অংশ থেকে মাসিক আয় হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের এই দুটি ভবন থেকে মাসিক আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। বিনিয়োগকারীদের প্রতি বর্গফুটের ভাড়া দিতে হচ্ছে ১০ টাকা; যার মধ্যে ৫ টাকা সার্ভিস চার্জ।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও সরেজমিনে ঘুরে তেমন কোনো কর্মযজ্ঞ চোখে পড়েনি। বিশাল আয়তনের বহুতল ভবনের সিলিকন টাওয়ারে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে আর ইনকিউবেশন সেন্টারে ৫ থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে দেখা গেছে। যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৪০০ কর্মী।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক রাজশাহীর ডেপুটি ডিরেক্টর মাহফুজুল কবীর বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় সিলিকন টাওয়ারের তিনজন বিনিয়োগকারীর সকল মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া সিলিকন টাওয়ারের টয়লেটসহ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে হাইটেক পার্ক ও আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।