চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৬ পিএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৯ পিএম
১৪ মাস সংস্কারকাজ শেষে ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দীর্ঘ কালুরঘাট সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। শুরুতেই কোনো টোল রাখছে না রেলওয়ে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।
বর্তমানে সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে ট্রাক-বাসের মতো ভারী যান চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালের ১ আগস্ট জরাজীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী ট্রেন চলাচলের জন্য সংস্কারকাজ শুরু করে রেলওয়ে। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আট মাসে সেতুটির সার্বিক সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত বছরের ১৮ জুন চুক্তি সইয়ের তিন মাসের মধ্যে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী এবং আট মাসের মধ্যে জনসাধারণসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা পারেনি। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। আপাতত টোল ছাড়াই কালুরঘাট সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। তবে বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী এখন সেতুর ওপর দিয়ে দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে দেওয়া হবে না। সর্বোচ্চ আট ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই এই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তবে ছাত্র-গণঅভুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে মানুষ ও যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে দিন ও রাতে বিভিন্ন সময়ে সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছে।
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ট্রেন চলাচলে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ নভেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ করেছিলাম। ইতোমধ্যে ট্রেনও চলাচল করছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলের জন্য সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখন সেতুর ওপরিভাগের শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করে রেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বালিযুক্ত জিও ব্যাগ স্থাপনের কাজ এখনও বাকি আছে। শীত মৌসুমের এসব কাজ শেষ করা হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, ব্রিটিশ আমলে শুধুমাত্র রেল যোগাযোগের জন্য ১৯৩১ সালে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যমান ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের কালুরঘাট সেতুটি ১৯৬২ সালে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে ৯২ বছরের পুরোনো এই সেতু দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেল ও ভারী যানবাহন চলাচল করছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে সেতুটির ভারী সংস্কার এবং গত এক দশক ধরে কয়েক দফা হাল্কা মেরামত করা হলেও সেতুটি বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত। ঝুঁকি বিবেচনায় সেতুটি দিয়ে বর্তমানে ট্রেন চলাচল করছে মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু করার জন্য সেতুটি বুয়েটের তত্ত্বাবধানে সংস্কারে হাত দেওয়া হয়।