সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:১০ পিএম
ফরিদপুরের সালথায় কাসেম ব্যাপারী নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চলছে বাড়িঘর-দোকান ভাঙচুর, লুটপাট এবং হত্যা মামলার আসামিও করা হচ্ছে।
গত ১৭ অক্টোবর হত্যাকাণ্ডের শিকার কাসেম ব্যাপারীর পিতা উপজেলার মধ্যবালিয়া গ্রামের পান্নু ব্যাপারী সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরকে প্রধান করে গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু জাফর মোল্যাসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদ ও তার ভায়রা আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ মাতুব্বর, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরু মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিক মাতুব্বর, গ্রাম্য মোড়ল হিরু মোল্যা, হাসান ব্যাপারীসহ কয়েক ব্যক্তি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এসব চাঁদাবাজি করছেন।
উপজেলার জয়ঝাপ গ্রামের মুসা তালুকদারের কাছ থেকে ১৩ লাখ, বালিয়ার শাহজাহান মাতুব্বরের কাছে থেকে তিন লাখ, সবুর খাঁর কাছ থেকে ৫০ হাজার, হাফিজুর মাতুব্বরের কাছ থেকে ২ লাখ, ওমর মাতুব্বরের কাছ থেকে ১ লাখসহ বালিয়া, পাটপাশা, গট্টি, জয়ঝাপসহ আশপাশের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এসব অপকর্ম ঢাকতে গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে ফরিদপুর সালথা উপজেলার বালিয়াগট্টি বাজারে বিএনপির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদ।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হত্যা মামলাকে পুঁজি করে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। এতে দলের ভাবমূর্তি চরম ক্ষুণ্ন হয়। আমি খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখব।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি নেতার সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি তো সবাইকে চিনি না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছিল কি-না জানা নেই। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বিএনপির সঙ্গে যোগ দিচ্ছেÑ এ কথা শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন বলেন, হামলা ও দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আমি এলাকাছাড়া। আবার হত্যার ঘটনা ঘটেছে জয়ঝাপ গ্রামে। অথচ আমাদের গট্টি ও বালিয়া গ্রামের অনেক লোককে আসামি করা হয়েছে। আমাদের হয়রানি করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা দেওয়া হয়েছে।’
ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, কাসেম ব্যাপারী নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় যাতে কোনো নিরীহ লোক হয়রানির শিকার না হয় সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।
তিনি বলেন, ওই যুবক নিহত হওয়ার পর থেকে বালিয়া এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তৎপর রয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর কাসেম ব্যাপারী ও মিলন নামে এক যুবক জয়ঝাপের ইমামবাড়ি মেলায় নৌকা বাইচ দেখতে যান। তাদের সাথে এক তরুণী ছিলেন। তরুণীকে উত্ত্যক্ত করেন জয়ঝাপ গ্রামের মুসা মোল্যার ছেলে বাহাদুর মোল্যা। এর প্রতিবাদ করলে বাহাদুর ও তার লোকজন চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কাসেম ও মিলনকে কুপিয়ে জখম করে। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা কাসেমকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মিলন এখনও ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।