সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২৬ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২৭ পিএম
ফরিদপুরের সদরপুরে মুলামেরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জোর করে মানববন্ধনে দাঁড় করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকালে ওই বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু কুচক্রী মহলের অভিযোগের বিরুদ্ধে মানবন্ধনের’ ব্যানারে এ মানববন্ধন হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগমের পক্ষে এ মানববন্ধন হয়।
এর আগে গত রবিবার মুলামেরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।
মুলামেরটেক, শ্যামের পাড়া, বৌদ্ধডাংগী, গনি মাতুব্বর ডাংগী, দলিল পত্তন্দার ডাংগী এলাকার কয়েকশ বাসিন্দা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণসংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম নিজের অন্যায় ও অনিয়ম আড়াল করতে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী জানায়, ‘আজকের মানববন্ধনের বিষয়ে তারা কেউ কিছু জানত না। প্রথম ক্লাস শেষে হঠাৎ হেড স্যার এসে মানববন্ধনে যাইতে বলে। আমরা বাড়ি যেতে চাই কিন্তু আমাদের জোর করেন। পরে আমরা তার ভয়ে সবাই মানববন্ধনে যাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, ‘সামনে আমার ছেলের পরীক্ষা। সকাল থেকে ক্লাস করে এমনিতেই বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, গতকাল আমার ছেলেকে স্কুল ছুটির পরে বাড়িতে আসতে না দিয়ে মানববন্ধন করানোর জন্য জোর করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নিজের স্বার্থে হাসিল করতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছে। এটা করা উচিত হয়নি। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এসব বিষয় দেখা উচিত।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মমতাজ নিজের অপকর্ম ঢাকতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন করিয়েছেন। গত রবিবার পাঁচ গ্রামের কয়েকশ বাসিন্দা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। এতে এলাকার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশ নেন। তাদের এখন কুচক্রীমহল বানিয়ে মানববন্ধন করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
মুকুল হাসান নামের একজন বলেন, ‘১৮ বছর যাবত একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে মমতাজ বেগম বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তার স্বামী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়াতে তাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওপরের স্তরে লোক থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরলেও এলাকায় মানুষের কোন লাভ হয়নি। এর প্রতিবাদে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। এলাকাবাসীর দাবি শিগগিরই মমতাজ বেগম প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অপসারণ করে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হোক।’
কোনো শিক্ষার্থীকে মানববন্ধনে অংশ নিতে জোর করা হয়নি বলে দাবি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগমের। তিনি বলেন, ‘মানববন্ধনের ব্যাপারে আমি কোনো শিক্ষার্থীদের জোর করিনি। এলাকার কিছু কুচক্রী মহল কয়েকদিন আগে একটা মানববন্ধনে আমার বিরুদ্ধে উল্টো পাল্টা অভিযোগ করে অপসারণের দাবি জানিয়েছে। বুধবার বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানিজিং কমিটির লোকজন আমার পক্ষে মানববন্ধন করলে শিক্ষার্থীরা দৌড়ে এসে অংশ নেয়।’
এ বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার সদানন্দ পাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। যদি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে সে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে, তাতে যদি সে অভিযুক্ত হয় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।