এম আর ইসলাম রতন, নওগাঁ
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
স্থানীয়দের নিয়ে গাছ রোপণ করেন আরিফুর রহমান (বা থেকে প্রথম)। প্রবা ফটো
পেশায় তিনি একজন শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিও বটে। ছাত্র গড়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজও সামলাচ্ছেন দক্ষ হাতে। তবে এসবের বাইরেও তার আছে অন্য পরিচয় তিনি একজন বৃক্ষপ্রেমী। গাছ রোপণ করাই যেন তার নেশা। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে মধ্যবয়সÑ এ সময়ে তিনি রোপণ করেছেন ৫০ হাজারেরও বেশি গাছ। বলছি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমানের কথা।
আরিফুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়নের বহুতি গ্রাম থেকে নিজ গ্রাম শহরাই হয়ে ডাবরকুড়ি পর্যন্ত প্রায় ৬২০টি তালগাছ রোপণ করেছিলেন, যা বর্তমানে তালপার্ক নামে পরিচিতি। এখনও বিভিন্ন রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানে ফুল, ফল, বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বৃক্ষপ্রেমিক মানুষটি নিজ এলাকায় সবুজের ফেরিওয়ালা নামেও পরিচিত।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি শুভকাজ তথা বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে তার দিনের শুরু। আর এভাবে চলছে দীর্ঘ সময়। বদলগাছীর শেষ প্রান্ত থেকে মাতাজী হয়ে নজিপুরের শুরু পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জাকারান্ডা, পলাশ, কদম, টগরসহ বিভিন্ন জাতে প্রায় তিন হাজার রঙিন ফুলের বিভিন্ন গাছ রোপণ করেছেন, যা বর্তমানে শোভাবর্ধন করছে। এ ছাড়া রাইগাঁ ইউনিয়নের প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, খাস জায়গা, কাঁচা-পাকা রাস্তার দুই পাশসহ মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, স্কুল, কলেজ এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করেছেন।
নওগাঁর তেঁতুলিয়া বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান সরদার একই সঙ্গে অধ্যক্ষ পদেও রয়েছেন। সবদিক সামাল দিয়ে বৃক্ষরোপণ করেন। এ কারণে এলাকায় তাকে ভালোবাসে সবাই। তার বৃক্ষপ্রেম এলাকায় সবুজায়নের প্রেরণা হয়ে আছে। তাকে অনুসরণ করছে অনেক তরুণ। মানুষের ভালোবাসা পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। অনেক কিছুর বিনিময়ে এটি অর্জন করতে হয়। প্রবল আন্তরিকতা আর ভালোবাসা ছাড়া এগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। অধ্যক্ষ আরিফ তা পেরেছেন এবং করে দেখিয়েছেন। তাই রাইগাঁর মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করে নিয়েছেন তিনি।
মাতাজিহাট বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি অধ্যক্ষ আরিফ একজন সমাজদরদি মানুষ। মানুষের সেবা করা ও বিপদে সহায়তায় তিনি সব সময় আন্তরিক। এ ছাড়া বৃক্ষরোপণ তার নেশায় পরিণত হয়েছে। শহরাই তাল পার্কের তালগাছগুলো ছাত্রজীবনে লাগিয়েছেন আরিফুর রহমান।
স্থানীয় সমাজসেবক আফাজ উদ্দীন বলেন, তিনি একজন ভালো মানুষ এবং আমাদের অনুপ্রেরণা। তিনি শহরাই তাল পার্কের তালগাছগুলো রোপণ করেছেন।
কবি গুলজার রহমান বলেন, বৃক্ষপ্রেমিক ছাড়াও তিনি একজন কবি ও সাদা মনের মানুষ। একটু সময় পেলেই বৃক্ষরোপণে বেরিয়ে যান। এলাকায় খুব জনপ্রিয় এ মানুষটি অলরাউন্ডার হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত।
কথা হয় আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি গাছ মানুষের ভালো বন্ধু। এ কারণে সময় পেলেই বৃক্ষরোপণ করি। তালগাছ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে, এজন্য ছাত্রজীবনে বন্ধুদের নিয়ে অনেক তালগাছ রোপণ করেছি। রাইগাঁ ইউনিয়নের সব রাস্তায় তালবীজ লাগিয়েছি। এ ছাড়া ইউনিয়নকে সবুজ ও রঙিন করতে দীর্ঘ সময় প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ লাগিয়েছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ চলমান রাখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। আমার একার পক্ষে অনেক কিছু করা যায় না। কিন্তু অনেককে সঙ্গে নিয়ে বড় কিছু করা সম্ভব। আত্মতৃপ্তি থেকে মানুষকে সাহায্য আর প্রকৃতিতে সবুজায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাই মিলে ভালো ভালো কাজ করলে দেশে দারিদ্র্য কমে যাবে, প্রকৃতি ফিরে পাবে তার নিজস্ব রূপ। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই গাছ রোপণের উৎসাহ পেয়েছি।
আরিফুর রহমান স্বপ্ন দেখেন একদিন তার রোপণ করা গাছগুলো বিভিন্ন রঙ ধারণ করে নিজ এলাকা আলোকিত করবে। আর সেই রঙের খেলার সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসবে।