মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫৮ পিএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২২ পিএম
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে পাঁচ বছর আগে প্রতিরক্ষা দেয়ালসহ সড়ক পাকাকরণ প্রকল্পের কাজ না করেই ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মুর্শেদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদার নুরুল ইসলাম সরকার এ টাকা আত্মসাৎ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমআরআরআইডিপি) আওতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ছয়টি সড়ক উন্নয়ন ও পাকাকরণ প্রকল্পের কাজ পায় আতিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭ টাকা চুক্তিমূল্যে বাস্তবায়ন করে অষ্টগ্রাম উপজেলা এলজিইডি অধিদপ্তর। প্যাকেজের আওতায় অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়নের আড়ারপাড় ঋষিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংযোগ সড়কের ১০০ মিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল ও সড়ক পাকাকরণে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতিক এন্টারপ্রাইজের সহযোগী ঠিকাদার নুরুল ইসলাম সরকার কোনো কাজ না করে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মুর্শেদের সহযোগিতায় বরাদ্দের পুরো অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, খানাখন্দে বেহাল দশা আড়ারপাড় ঋষিপাড়া কাঁচা সড়কটি। আড়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ঋষিপাড়ার মানুষের চলাচলের প্রধান এ সড়কটিতে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যানবাহন ও পথচারীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত এমন দুর্ভোগে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগে সড়কটি পাকা হবে বলে তারা শুনেছে। পরে কেন হয়নি, তা জানে না। এখন শুনতে পাচ্ছে, কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ঠিকাদার। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণের দাবি জানায় তারা।
শিক্ষার্থী লাদেন হোসেন বলে, কয়েক বছর আগে সড়কটি পাকা হবে শুনেছি। পরে কেন হয়নি, তা জানি না। আমরা বারবার বলেও রাস্তাটি পাকা করাতে পারিনি। এখন শুনছি কাজ না করেই ঠিকাদার বরাদ্দের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। আমরা স্কুলশিক্ষার্থী ও শতাধিক পরিবারের মানুষ এই ভাঙা রাস্তা দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। বৃষ্টির সময় দুর্ভোগে পড়তে হয়। রাস্তা পাকাসহ ঠিকাদারের বিচার চাই।
প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করেও নুরুল ইসলাম কীভাবে টানা দুই বছর ‘সিআইপি’ পুরস্কার পেলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কাজ না করে পাঁচ বছর আগে বিল তুলে আত্মসাৎ করে বিষয়টি গোপন রাখার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণের দাবি করে স্থানীয়রা।
আতিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার লাইসেন্সে অষ্টগ্রামের নুরুল ইসলাম সরকার প্যাকেজটি পান। তিনি কাজ নিয়ে কী করেছেন, জানি না। তার সঙ্গে কথা বলেন। কাজ না করে বিল তুলে নিলে নুরুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী অন্যায় করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। প্রতিরক্ষা দেয়ালের কাজ হয়েছিল। রাস্তার জায়গা নিয়ে সমস্যা থাকায় বাকি কাজ হয়নি।’ তৎকালীন অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মুর্শেদ বলেন, ‘এত দিন আগের বিল, আমার মনে নেই।’ জেলা প্রকৌশলী দপ্তরে খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি বলেন।
অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ রেজাউল হক জানান, আড়ারপাড় ঋষিপাড়া সড়কের কাজ না করে নুরুল ইসলাম সরকারের বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জেনে সরেজমিনেও সত্যতা পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।