× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

কাউসারের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৪০ পিএম

কাউসার মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

কাউসার মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার মৃত্যু হয় চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র কাউসার মাহমুদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে দাবি পরিবারের। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, অনেক আগ থেকে কাউসার মাহমুদ অসুস্থ ছিলেন। আন্দোলনে আহত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেনÑ এমন দাবি সত্য নয়। কাউসার মাহমুদের চিকিৎসার ঘটনাক্রম পর্যালোচনা করেও আন্দোলনে আহত হওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ফলে তার মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

কাউসার মাহমুদের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মূত্রনালির সংক্রমণ, শারীরিক আঘাতজনিত কারণে মাসল ব্রেকডাউন হয়ে তীব্র কিডনি ইনজুরি, একাধিক অঙ্গের কর্মহীনতার কারণে মৃত্যু হতে পারে। সাধারণত মারধরের কারণেও কিডনি বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে কাউসার মাহমুদকে চিকিৎসাসংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পরবর্তী ১৬ দিন পর্যন্ত কোনো আঘাতের কথা কিংবা আঘাত সম্পর্কিত চিকিৎসার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে ভর্তির ১৬ দিন পর প্রথমবারের মতো রোগীর পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে আনেন।

গত ৫ আগস্ট থেকে কাউসার মাহমুদ চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তাকে সেখান থেকে ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক থেকে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। 

কাউসার মাহমুদের রেফারেল নোটে পরিবারের বরাত দিয়ে সেই তথ্য উল্লেখ করলেও সেটির দায় নিতে রাজি নয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল। হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মো. ইদ্রিস উল্লাহ ভুঁইয়া বলেন, ‘কাউসার মাহমুদকে এখানে ভর্তি করার পর তার পরিবার হামলায় আহত হওয়ার কথা বলেনি। আমরাও কোনো আঘাতের দাগ দেখিনি। পরে তারা দাবি করার পর বিষয়টি রেফারেল নোটে উল্লেখ করেছি। এটি আমাদের তথ্য নয়। আমাদের তথ্য হলো তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

জরুরি বিভাগে কাউসারকে চিকিৎসা দেন ডা. নিগার সুলতানা। তিনি বলেন, ‘তাকে আমি জ্বর, ডায়রিয়ার, শ্বাসকষ্টের রোগী হিসেবেই পেয়েছি। সঙ্গে খিঁচুনি ছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে পাঠানো হয়।’ কাউসারের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. নিগার সুলতানা বলেন, ‘তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। থাকলে সেটা চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ করা হতো।’

আইসিইউতে কাউসারকে চিকিৎসা দেন ডা. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘আইসিইউতে থাকা পর্যন্ত রোগী, রোগীর বন্ধু কিংবা পরিবার কেউ মারধরের কোনো হিস্ট্রি দেয়নি। এক্সটার্নাল কোনো আঘাত ছিল না। এমআরই করা হয়েছিল। সেখানেও ইন্টারনাল কোনো আঘাতের তথ্য ছিল না।’

প্যাথলজি রিপোর্ট অনুযায়ী কাউসার মাহমুদ ক্রনিক কিডনি ডিজিজের স্টেজ থ্রিতে ছিলেন। তার দুটো কিডনিই বিকল ছিল। তার রক্তে সিরাম ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২৩। এটি সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩ পর্যন্ত থাকলে স্বাভাবিক ধরা যায়। রক্তে এর মাত্রা তখনই বৃদ্ধি পায় যখন কিডনি বিকল হতে থাকে। 

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে কাউসারের কিডনি-সংক্রান্ত কনসালট্যান্ট ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, মারধরের কারণে কিডনি বিকল হতে পারে। এটি মাসল ব্রেকডাউনের কারণে হয়। বেধড়ক পেটালে এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকবে। আগস্টের শেষ দিক থেকে তার চিকিৎসা শুরু করি। এর আগে অন্য একজন চিকিৎসক ছিলেন। ততদিনে আঘাত থাকার কথা না।’ শুরুর দিকে চিকিৎসা দেওয়া ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘মাসল ব্রেক ডাউনের কোনো হিস্ট্রি তার ছিল না। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

তবে চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সম্পর্কিত নথির সঙ্গে মিলছে না কাউসারের বাবা আব্দুল মোতালেবের কথা। তিনি বলেন, ৪ আগস্ট সে আন্দোলনে গিয়েছিল। ৫ আগস্ট সকালে তার ব্যথা শুরু হয়। পরে রক্ত বমি শুরু হলে তাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এর আগে তার কোনো অসুখ ছিল না। আইসিইউতে থেকে বের করার পর ১৭ দিনের মাথায় ছেলে আমাকে বলে সে আন্দোলনে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। ভয়ে আমাদের বলেনি। সে বলার পরে ২১ তারিখে আমি ডাক্তারদের জানিয়েছি মারধরের বিষয়টি।’ কাউসারের শরীরে মারধরের আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ দেখেছি। তার পুরো শরীরে মোটা কালো দাগ ছিল।’ তাহলে সেটি কেন চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ নেই কিংবা তিনি কেন তখন আঘাতের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন তা স্পষ্ট করতে পারেননি তিনি।

তবে বিষয়টি নিয়ে বেশ কানাঘুষা চলছে কাউসারের প্রতিবেশী ও চিকিৎসকদের মধ্যে। তারা বলছেন, পরিকল্পনা করে এই দাবিটি করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মকর্তা এই বিষয়ে প্রায় অভিন্ন মতামত দিয়েছেন। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা বলেন, ‘মূলত আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে এমন ঘোষণার পরই এই দাবিটি সামনে আসে।’ একাধিক গণমাধ্যমে কাউসারের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন কাউসারকে দেখতে হাসপাতালে আসেন।

স্পর্শকাতর ইস্যু হওয়ায় এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে চাননি কোনো সমন্বয়কও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সমন্বয়ক বলেন, ‘তার বিষয়ে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিজিসি ট্রাস্টের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঢাকায় জানানো হয়। ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য বিভাগে ও আমাদের জানানো হয়। এখন শুনছি এই দাবি সত্য নয়। এটি খতিয়ে দেখছি।’ 

অন্তত চট্টগ্রামের ছয়জন সমন্বয়কের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের সবারই ভাষ্য, ২১ আগস্টের আগে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না তারা। পরিবারের দাবি আমলে নিয়ে তার ভিত্তিতেই তারা কাউসারের চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করেছেন।

আন্দোলনের স্বপক্ষে ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেছেন কাউসার। তবে ৪ আগস্ট কিংবা এর আগে পরে কাউসার আন্দোলনে রাজপথে গিয়েছিল কি না এটি কেউ জানাতে পারেনি। স্থানীয়রা বলছে, কাউসার আগে থেকে অসুস্থ ছিল। এই বিষয়টি এলাকার প্রায় সবাই জানত। তার পক্ষে আন্দোলনে যাওয়া সম্ভব ছিল না। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ৪ আগস্ট সারাদিন বাসায়ই ছিল কাউসার মাহমুদ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা