রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৭ পিএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১৩ পিএম
‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইনটি বড় অক্ষরে লেখা। আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের অবয়ব। তৈরি করা হয়েছে আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারও। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনের নানা দৃশ্য। প্রতীকীভাবে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রও। আড়াআড়ি করে রাখা বাংলাদেশ-ভারতের জাতীয় পতাকা। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দুই দেশের সৌহার্দের চিত্র।
এসব দৃশ্য চোখে পড়বে ভারতের অঙ্গরাজ্য বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরার আগরতলায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আগরতলার আচার্য জগদীশ বসু সরণি (রোনাল্ডসে রোড) যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। সড়কটি ধরে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে এমন নানা দৃশ্য।
জনসংখ্যা এবং আয়তনে ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা। এর আয়তন সাড়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। ত্রিপুরার তিনদিকেই বেষ্টন করে আছে বাংলাদেশ। তাই এটি বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। তৎকালীন ত্রিপুরা সরকারসহ আপামর মানুষ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় শুধু শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি। বরং মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে ত্রিপুরাবাসীর ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। ত্রিপুরায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে নির্মিত হয়েছে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’ নামের আন্তর্জাতিক মানের একটি পার্ক। যার প্রতি ইঞ্চি জমিতে নানা নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের মুক্তি সংগ্রাম এবং এর ইতিহাস। রয়েছে ভারতীয়দের অবদানেরও বহু স্মৃতি। এই উদ্যানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে প্রথমবারের মতো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থান সংরক্ষণ করা হলো। দক্ষিণ ত্রিপুরার বিলোনিয়া মহকুমার চোত্তাখোলায় ১২০ একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে এই উদ্যান। ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’-এর পর ত্রিপুরায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে দুর্গাপূজায় এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন অনেকের নজর কেড়েছে।
আমাদের স্বাধীনতার নানা দিক নিয়ে পুজোমণ্ডপটির অবস্থান রামনগর-কৃষ্ণনগর এলাকায়। ব্লাড মাউথ ও কের চৌমুহনী পূজা উদযাপন কমিটি যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। ব্যতিক্রমী এ আয়োজন দেখতে স্থানীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে সেখানে যাচ্ছেন। ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন।
মণ্ডপ পরিদর্শন করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয়ভাবে ছবি সংগ্রহ করে দেখা যায়, সড়কের পাশ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও আমাদের সংস্কৃতির নানা দিক। এসবের পাশাপাশি রয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেএস আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করছেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানিদের হাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানিদের আগরতলা দখলের ষড়যন্ত্রকে ভেস্তে দিয়ে আলবার্ট এক্কা ও ভারতীয় সেনার কামান, আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের হাবুল ব্যানার্জির বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড হাসপাতাল, ১৯৬৩ সালে ত্রিপুরার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন্দ্র লাল সিংহের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গোপন বৈঠকে ছাড়াও বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে।
আগরতলার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মনোজ চৌধুরী এটিকে প্রাসঙ্গিক একটি আয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন। ছবি তুলে পাঠিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সবকিছুই তুলে ধরা হয়েছে পূজার আয়োজনকে ঘিরে। এটি ব্যতিক্রম। অনেক বাংলাদেশিও আসছেন এই আয়োজন দেখতে। পুরো আয়োজনটাই সড়কের ধারে। যে কারণে চলার পথেই সব দেখা যায়। রাতের কৃত্রিম আলোয় বিষয়গুলো আরও সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।