রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫৬ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০২ পিএম
শব্দের মাত্রা পরিমাপ করছেন বরেন্দ্র পরিবেশ স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরা। শনিবার রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায়। প্রবা ফটো
অতিরিক্ত শব্দের
মধ্য থেকে একজন ট্রাফিককে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এমন অবস্থায় যখন ৮ ঘণ্টা সড়কে দায়িত্ব
শেষে বাসায় ফেরেন তখন বাড়িতেও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকার
ফলে ট্রাফিক পুলিশদের মধ্যে এমনটা লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি একটা সময় কানে কম শোনেন তারা।
সড়কে শব্দদূষণের ফলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সমস্যার কথা তুলে ধরে এমনটাই জানান সার্জেন্ট
আ. কাইয়ুম।
একই কথা জানিয়েছেন
রাজশাহী নগরীর উপশহর এলকার বাসিন্দা হায়দার আলী। তিনি বলেন, শিশু বা কর্মজীবী আমরা
চাইলেও এই শব্দদূষণ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারছি না। শব্দদূষণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে
আমাদের জীবনে। কর্মশক্তি কমে যাওয়া, সব সময় মেজাজ খিটখিটে থাকা, শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়াÑ
এসবের প্রধান কারণ এই শব্দদূষণ।
রাজশাহীতে প্রতিনিয়ত
শব্দদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ নানা ধরনের যানবাহন বৃদ্ধি,
চালকদের অসচেতনতা, উন্নয়নের নামে নগরী থেকে বৃক্ষনিধন শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম
প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের বড় সহায়ক হতে
পারে বৃক্ষরোপণ। সেই সঙ্গে যানবাহনে হাইড্রলিক হর্নের বিকল্প নিয়ে ভাবার পাশাপাশি চালকদের
সচেতন হতে হবে।
সড়ক প্রশস্তকরণ,
ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সুউচ্চ ভবন নির্মাণের নামে নগরীতে একদিকে যেমন বৃক্ষনিধন হচ্ছে,
তেমনি নগরীর সড়কে ধারণক্ষমতার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় নগর
উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনাকে প্রাধান্যেরও দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
নগরীর অন্যতম ব্যস্ত
সড়ক রেলগেট। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে এখানে শব্দের মাত্রা
থাকা উচিত ৭০ ডেসিবল। তবে সাউন্ড লেভেন মিটার দিয়ে পরিমাপ করে পাওয়া গেছে ৯৬.৩০ ডেসিবল।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে বিভিন্ন এলাকাকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে নীরব
এলাকায় শব্দের মাত্রা থাকা উচিত ৫০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫৫, মিশ্র এলাকায় ৬০, বাণিজ্যিক
এলাকায় ৭০ এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবল। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজশাহীর এমন এলাকাগুলোতে
শব্দের মাত্রা ২০ থেকে ২৮ ডেসিবল বেশি পাওয়া গেছে। আর অসচেতনতা ও তদারকির অভাবে সৃষ্ট
অতিমাত্রায় শব্দদূষণ নগরবাসীর জীবনযাপনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
বরেন্দ্র পরিবেশ
স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংগঠন গত তিন বছর ধরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ
পাঁচটি মোড়ে শব্দদূষণেন মাত্রা পরিমাপ করে আসছে। সংগঠনটির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালে
রুয়েট সংলগ্ন তালাইমারি মোড়ে শব্দের গড় মাত্রা নির্ণয় করা হয় ৮৪ ডেসিবল, ২০২৪ সালে
৮৮.৮০ ডেসিবল। হাসপাতাল এলাকা লক্ষ্মীপুর মোড়ে ২০২২ সালে ছিল ৯০ আর ২০২৪ সালে ছিল ৯৬.১০
ডেসিবল। সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ২০২২ সালে ছিল ৮৮ এবং ২০২৪ সালে ৯০.৫০ ডেসিবল। রেলগেট
এলাকায় ২০২২ সালে শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবল, ২০২৪ সালে তা হয় ৯৬.৩০। এ ছাড়া রাজশাহীর
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা হিসেবে পরিচিত বিসিক শিল্প নগরীতেও শব্দের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংগঠনের আহ্বায়ক
জাকির হোসেন খান বলেন, গত তিন বছরে শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা মানুষ ও পরিবেশের
জন্য ক্ষতিকর। পরিস্থিতি উত্তরণে তিনি দাবি করেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরীতে
পরিবেশবান্ধব বড় বৃক্ষ রোপণে এগিয়ে আসতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে যানবাহনে অহেতুক
হর্ন ব্যবহারকারীদের।
তিনি দাবি করেন, বিগত বছরগুলোতে নগরীর উন্নয়নের নামে সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক বিভাগের পাশাপাশি নগরবাসী বৃক্ষনিধন করেছে। অথচ বড় বড় বৃক্ষগুলো শব্দদূষণ রোধে ভূমিকা রাখে, যা অনেকেই জানে না। গাছ কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো শব্দও শোষণ করে। এ ছাড়া আইন থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চালকরা অযথা হর্ন বাজিয়ে চলেছে। যেসব হর্ন নিষিদ্ধ তাও ব্যবহার করছে। শব্দদূষণ রোধ করতে না পারলে এর বিরূপ প্রভাব আমাদের সবাইকেই ভোগ করতে হবে।