ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২৩ পিএম
ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে রবিবার (১৩ অক্টোবর । আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে জারি থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে, মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। নিষেধাজ্ঞা সফল করতে নদ-নদী ও সাগরে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর কঠোর নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞা সফল করতে মৎস্য বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলারমালিক, আড়তদার ও জেলেরা। তবে মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০ বার দুর্যোগের কবলে পড়ে এবং মাঝখানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে জাল ফেলতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ আহরণ করতে পারেননি জেলেরা। ফলে অধিকাংশ মালিক ও আড়তদার লোকসানে রয়েছেন এবং লোকসানে পড়ে অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন বলে তাদের দাবি। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মৎস্যসংশ্লিষ্টরা।
এক সপ্তাহ পর গত শুক্রবার দুপুরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ করে শরণখোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরে আসে এফবি নাসরিন নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার। ট্রলারটির মাঝি ছালেক হাওলাদারের দাবি, এই ট্রিপে তারা ৬০০টি ইলিশ পেয়েছেন। কিন্তু মাছের আকার ছোট। তাদের ট্রলারে ১০ জন জেলে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। মাছের দাম ভালো পেলে খরচ উঠতে পারে। তিনি বলেন, এ বছর বারবার দুর্যোগে তারা সাগরে ঠিকমতো জাল ফেলতে পারেননি। তাদের মহাজন প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছেন।
শরণখোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার কবির হাওলাদার জানান, একসময় তার পাঁচটি ট্রলার সাগরে যেত। লোকসান গুনতে গুনতে সবকিছু হারিয়েছেন। এখন শুধু এফবি খায়রুল নামের একটি ট্রলার রয়েছে। এ বছর একদিকে যেমন দুর্যোগ, তেমনি নিষেধাজ্ঞা আর সাগরে আগের মতো মাছ না পড়ায় বেশিরভাগ মহাজন তার মতো লোকসান টানছেন।
শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘দুর্যোগ আর নিষেধাজ্ঞায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ছয় মাসের ইলিশ মৌসুমের তিন মাসই থাকে নিষেধাজ্ঞা। বাকি তিন মাস যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে। এ কারণে সাগরে জাল ফেলতে না ফেলতেই কূলে ফিরতে হয় জেলেদের।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএমএম রাসেল বলেন, ‘ইলিশের প্রজনন ও মা ইলিশ রক্ষার জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলছে। সকল নদ-নদী ও সাগরে মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। নিষিদ্ধ এই সময়ে আইন অমান্য করে কেউ ইলিশ আহরণ, মজুদ, পরিবহন বা বিক্রি করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া এলাকার পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন মাছের নৌকা, ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে ঘাটে ভেড়ানো হচ্ছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। কেউ কেউ আবার নিষেধাজ্ঞার আগে শেষবারের মতো নদীতে যাচ্ছেন মাছ ধরতে। তবে তাদের ফিরতে হবে আজ রাত ১২টার আগেই। কেউ কেউ আবার আগে থেকেই জাল, নৌকাসহ মাছ ধরার সব উপকরণ তুলে এনেছেন ঘাটে। একই চিত্র দেখা গেছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার জেলেদের মধ্যে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারি প্রণোদনার দাবি এই দুই এলাকার মৎস্যসংশ্লিষ্টদেরও।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকরা)