ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩২ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:০৬ পিএম
ডাকাতির প্রতিবাদে ভৈরবে ঘাট থেকে ছাড়ছে না কোনো নৌযান। প্রবা ফটো
নদীবন্দর ভৈরব থেকে নৌপথে অরুয়াইলের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার । এর মধ্যে রয়েছে ভৈরব, আশুগঞ্জ, আজিমপুর, বড়ইচড়া, পরমানন্দপুর এবং বৈশ্বর নৌঘাট। এই ঘাটগুলো দিয়ে ট্রলারগুলো চলাচল করার সময় আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট থেকে পানিশ্বর এলাকার মা-মনী ইটখলা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় কোনো না কোনো স্থানে প্রতিনিয়তই ডাকাতির শিকার হচ্ছে।
ডাকাতির প্রতিবাদে ভৈরবে ঘাটে নৌযান নোঙর করে ধর্মঘট করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের অরুয়াইলগামী মাল বোঝাই ট্রলারের মাঝিরা। কোনো মালামাল লোড ও যাত্রীরা বহন করছে না ২০টি ট্রলার। রবিবার (১৩ অক্টোবর) ভৈরব বাজার নদীরপাড় এলাকা থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো নৌযান। ঘাট খালি পড়ে আছে। এতে বিপাকে পড়ছে ভৈরব বাজারের ব্যবসায়ীরা ও নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরাইলের পানিশ্বর এলাকা হচ্ছে মেঘনা ও কুশিয়ারা নদীর মিলনস্থল। এ এলাকার নদী ঘোনা এলাকা হওয়ায় এবং ত্রিমুখী নদী পথ থাকায় ডাকাতরা ডাকাতি করে সহজে পালিয়ে যেতে পারে। এদিকে ভৈরব থানা বলছে এটি আশুগঞ্জ থানার এরিয়াভুক্ত, আর আশুগঞ্জ থানা বলছে এটি ভৈরব থানার এরিয়াভুক্ত। দুই থানার এই ‘রশি টানাটানিতে’ ডাকাতরা সুযোগ নিচ্ছে।
আজিমপুরের কামাল মাঝি, বড়ইচড়ার ফরিদ মাঝি, পর্মানন্দপুরের জাহের মাঝি ও বৈশ্বরের আনফর মাঝি বলেন, আমরা একা নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারছি না। গত ৩ মাসে ৫টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি নৌকা ডাকাতি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসের ১১ ও ১২ অক্টোবর আমরা ডাকাতের ধাওয়া খেয়েছি। এ বিষয়ে ভৈরব ও আশুগঞ্জ পুলিশকে অবগত করলেও এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ জন্য আমরা ধর্মঘট করেছি।
এ বিষয়ে মাঝি আজিজুল বলেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম মাঝিকে মারধর করে ডাকাতদল। এ সময় তাকে কুপিয়ে আহত করে সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আমিও কয়েকবার ডাকাতির শিকার হয়েছি। প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে চলাচাল করতে হয় নদী পথ দিয়ে।’
মাঝি মহি উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ থেকে অরুয়াইল যাওয়ার পথে ডাকাতির শিকার হয়েছি। এ সময় আমার ট্রলারে থাকা নারী যাত্রীদের স্বর্ণালংকার ও পুরুষ যাত্রীদের টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদের অনুরোধ করার পরেও এক নারী যাত্রীর কান ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। আমরা আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ প্লান্ট পার হওয়ার পরই ডাকাতির শিকার হয়। এ ছাড়াও ১১ ও ১২ অক্টোবর ডাকাতদের ধাওয়া খেয়ে আমরা কোনো রকম বেঁচে যাই।’
ভৈরব ও অরুয়াইল নৌযান চলাচল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল বলেন, ১২ অক্টোবর নৌকা নিয়ে ভৈরব থেকে অরুয়াইলের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর পানিশ্বর এলাকায় ডাকাতির হামলার শিকার হয়েছি। পরে আমরা তিন চারটি নৌকা একসঙ্গে অরুয়াইলের উদ্দেশে রওনা দেয়। যদিও আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি তবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। ইতোমধ্যে গত ২/৩ মাসে ২০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এই কয়েক দিনে প্রায় শতাধিক মোবাইলও লুট হয়েছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, ‘আমি বিভিন্ন কাঁচামাল অরুয়াইলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু অরুয়াইলগামী মাঝিরা ধর্মঘট করেছে। ডাকাতির ভয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছে। আমি ৫০০ টাকা খরচের মালামাল ১৫০০ টাকা খরচ করে অরুয়াইল পাঠিয়েছি।’
মসলা ব্যবসায়ী কবীর ও ভুসি ব্যবসায়ী আব্দুল বাসেদ বলেন, ‘নদী বন্দর ভৈরব থেকে নৌ পথে ৭৫ শতাংশ মালামাল সরবরাহ করা হয়। ভৈরব থেকে অরুয়াইলের পথে বেশিরভাগ মালামাল পাঠানো হয়। কিন্ত ডাকাত আতঙ্কের কারণে বন্ধ রয়েছে অরুয়াইলের পথে নৌ চলাচল। এতে আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি। প্রতিদিন ভৈরব ঘাট দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
অরুয়াইলের যাত্রী আকবর আলী মেম্বার বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে যেতে সহজ পথ নৌ পথ। সড়ক পথে র্দীঘ সময় লাগে ও হয়রানির শিকার হতে হয়। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। এদিকে ডাকাত আতঙ্কে নৌ পথে চলাচল করতে পারছি না। সরকার ও প্রশাসনের নজরদারি কামনা করছি।’
এ বিষয়ে নৌ-ঘাটের ইজারাদার খোকা মিয়া বলেন, ‘নৌকার মাঝিরা আমার কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছে। ডাকাতি প্রসঙ্গে আমি আশুগঞ্জ ও ভৈরব নৌ-পুলিশকে অবগত করেছি। ডাকাতির জন্য ভৈরব থেকে অরুয়াইলের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘মাঝিদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের নৌ-পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। মাঝিদের নৌকা নিয়ে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান করতে পারব।’