× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঋণের বোঝা নিয়েই ফিরছেন জেলেরা

এমএ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম

আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৮ পিএম

মাছ ধরা শেষে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর ধানদী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো

মাছ ধরা শেষে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর ধানদী লঞ্চঘাট এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো

দেশের অন্যতম অভয়াশ্রম কেন্দ্র তেঁতুলিয়া নদীতে কয়েক বছর ধরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ইলিশ। এ বছরও মাছ না পাওয়ায় দুশ্চিন্তা-হতাশার মধ্যেই শেষ হচ্ছে মৌসুম। মৌসুম শেষে হিসেবের খাতায় দাদন ও ঋণ বাড়ছে জেলেদের। ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অপরদিকে চড়া দামের কারণে বেশিরভাগ মানুষের পাতে উঠেনি ইলিশ। ফলে ক্রেতারাও জানিয়েছেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

আগামী ১৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হবে মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নভেম্বর থেকে শুরু হবে জাটকা ধরার ২৪০ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এর পরপরই শুরু হবে সাগরে মৎস্য আহরণের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। শেষ হওয়া মৌসুমে তেঁতুলিয়া নদী, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ উপজেলার প্রায় ছয় হাজার জেলে।

মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ইলিশের মৌসুম। জেলেরা সারা বছর ধরে এ মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। এ সময় তেঁতুলিয়া নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। তবে কয়েক বছর ধরে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছ কমছে। ব্যবসায়ীদের হিসাবে এ বছর জুলাই মাসে আনুমানিক ৯০০ মণ, আগস্টে ১ হাজার ১০০ মণ ও ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মণ ইলিশ আড়তে এসেছে। চলতি মাসে ইলিশের পরিমাণ অনেক কম। প্রতিদিন ১৫ মণের কম ইলিশ আসছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর এ সময় প্রতিদিন প্রায় ২০-২২ মণ ইলিশ পাওয়া যেত। গত মৌসুমের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ হারে ইলিশ কমেছে। 

এদিকে ইলিশ মাছ কম থাকায় দামও চড়া। এক কেজি বা তার চেয়ে বড় ইলিশ প্রতি মণ ৭৮ থেকে ৮৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব ইলিশ (৬০০-৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ৫৬-৬৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর জাটকা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ হাজার টাকা দরে। খুরচা বাজারে দাম আরও বেশি। জুলাই ও আগস্টের ছাত্র আন্দোলন, কারফিউসহ দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ থাকায় মাছের দামও কম ছিল। সম্প্রতি ভারতে রপ্তানি ও ইলিশের পরিমাণ কম থাকায় দামও চড়া বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় আশানুরূপ ইলিশ শিকার করতে পারেনি। একাধিকবার সাগরে গিয়েও অনেক জেলে খালি হাতে ফিরেছেন। 

অপরদিকে ইলিশের অন্যতম প্রধান অভয়াশ্রম তেঁতুলিয়া নদীতে তেমন মাছ না থাকায় হতাশ ছোট ও মাঝারি জেলেরা। মৌসুমের শুরুর দিকে আহরণ করা ইলিশেও তেমন দাম পাওয়া যায়নি। সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের শুরুর দিকে দাম বাড়লেও মাছ না পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেনি তারা।

উপজেলার চন্দ্রদ্বীপের জেলে মো. রফিক মাঝি বলেন, দিন দিন তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছের পরিমাণ কমছে। এ বছর মৌসুমজুড়েই ছিল ইলিশের আকাল। ইলিশ না পাওয়ায় মৌসুম শেষে ঋণ বাড়ছে। আড়তদারের কাছ থেকে ২ লাখ ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। মৌসুমে ইলিশ বিক্রি করে পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে মৌসুম শেষে হিসাবে দেনা বাড়ছে। কীভাবে পরিশোধ করব, তার কোনো উপায় দেখছি না।

কালাইয়া বগি তুলাতলা এলাকার জেলে শহীদ মোল্লা তেঁতুলিয়া নদী ও সাগরে মাছ ধরেন। তার ট্রলারে চারজন জেলে রয়েছে। এ বছর তিনি চারবার সাগরে গিয়েছেন। প্রতিবার ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে দুবার শুধু খরচের টাকা উঠেছে। বাকি সময় তেঁতুলিয়া নদীতে জাল ফেললে ইলিশের আর দেখা পাননি। তিনি বলেন, এ বছর সাগরে ও নদীতে মাছ ধরার খরচ বাবদ আড়তদারের কাছ থেকে ৪ লাখ দাদন নিয়েছি। ব্যাংক লোনও আছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার; যা মাছ পেয়েছি তা বিক্রি করে খরচ দিয়ে সমান সমান। ঋণের বোঝা মাথাই রয়ে গেছে।

একই কথা জানান জেলে মোকলেছ মাঝি, সুজন দফাদার, এছাহাক মাঝি ও কুদ্দুস বয়াতি। তাদের ভাষ্য, বর্ষার শুরুতে নদীতে মাছ টুকটাক ছিল। তখন মোকাম ভালো ছিল না। শেষের দিকে যখন মোকাম ভালো হয়। মাছের দাম বাড়ে, তখন নদীতে মাছ পাওয়া যায়নি। বছর শেষে আমাদের ঋণ রয়েই গেছে। কীভাবে সংসার চলবে আর কিস্তি দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। 

এদিকে চড়া দামের কারণে ইলিশ কিনতে না পারায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্রেতারা। কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা আখিরুল আসিলাম শাওন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে ইলিশ খাওয়া এখন বিলাসিতা। মাঝারি সাইজের একটি ইলিশের দাম দেড় থেকে ২ হাজার টাকা; যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে ইলিশ খাওয়া সম্ভব নয়। একই কথা জানালেন পৌ শহরের বাসিন্দা শিবলী সাদেক, মো. কামরুল ও বগা বন্দরের মো. রাসেলসহ অনেকে। 

নির্বিচারে জাটকা নিধনে ইলিশ কমছে বলে দাবি করেছেন জেলেরা। তারা জানান, সাগর মোহনা থেকে শুরু করে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধাজাল দিয়ে ইলিশের ডিম, চাপিলা ও জাটকা ধ্বংস করা হয়। যার কারণে মৌসুমে ইলিশের আকাল দেখা দেয়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লোকমান আলী বলেন, সাগর মোহনায় ডুবোচরের বিষয় নিয়ে আমরাও ভাবছি। ইলিশ যখন মাইগ্রেড করে সাগর থেকে নদীতে আসে, তখন তার একটি নির্দিষ্ট গভীরতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে মোহনায় যখন পর্যাপ্ত গভীরতা পায় না, তখন তারা আবার সাগরে ফিরে যায়। এটা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ড্রেজিং। দেশে সাগর মোহনা ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়নি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলে, সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক সচেতনতা সভা হয়েছে। অবরোধকালীন কেউ মাছ শিকারে নদীতে নামলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। শতভাগ মা-ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হলেই ইলিশ বাড়বে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা