নারী ইউপি সদস্যের কোমরে রশি বেঁধে মারধর করলেন যুবদল নেতা

রাজবাড়ীতে পরকীয়ার ‘অপবাদ দিয়ে’ দুই ইউপি সদস্যকে মাজায় দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করেছেন স্থানীয় এক যুবদল নেতা। এ সময় স্বর্ণের চেন, মোবাইল লুট ও টাকা দাবিরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজবাড়ী সদর থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মারধরের একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মারধরের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীরা হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উজ্জল সরকার এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য হেলেনা বেগম। অভিযুক্ত রায়হান খান বসন্তপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। হেলেনা বেগম বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ভিডিওতে দেখা যায়, উজ্জল সরকার ও হেলেনা বেগমকে মাজায় দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন রায়হান খান। মারধরে হেলেনা বেগম আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার করছেন। এ সময় কয়েকজন অকথ্য ভাষায় দুই ইউপি সদস্যকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে  হেলেনা বেগমের গলা থেকে চেন খুলে নেন। চেন খোলার সময় ইউপি সদস্য হেলেনা বেগমকে বলতে শোন যায়, ‘এটি বিয়ের সময় আমার স্বামী আমাকে দিয়েছে।’ দুই ইউপি সদস্যকে মারধর করার জন্য পাশ থেকে আরও এক যুবককে লাঠি হাতে তেড়ে আসতে দেখা যায়। পাশাপাশি ঘরের মধ্যে অনেক লোকজন দেখা যায়। কয়েকজনকে মারধরের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইউপি সদস্য উজ্জল সরকার ও হেলেনা বেগম স্থানীয় পূজামণ্ডপে পূজা দেখেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে উজ্জল সরকার হেলেনা বেগমকে বাজিতপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে নামিয়ে দিতে যান। এ সময় কয়েকজন ওই বাড়িতে গিয়ে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে দুই ইউপি সদস্যকে ধরে নিয়ে আসেন। পরে তাদের মহারাজপুর ব্রিজ এলাকার একটি দোকানঘরে আটকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে হেলেনা বেগমের গলা থেকে স্বর্ণের চেন খুলে নেওয়ার পাশাপাশি দুজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রায়হান খানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

ইউপি সদস্য উজ্জল সরকার বলেন, ‘হেলেনা বেগমের মোবাইল থেকে একটি ফোন আসে সে শিবরামপুরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ফোন পেয়েই সেখানে যাই। পরে তাকে রিকশায় করে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে আমাকে কয়েকজন যুবক ওই মহিলা মেম্বারের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দুজনকে ধরে এনে টাকা দাবি করাসহ মাজায় দড়ি বেঁধে মারধর করে। এ বিষয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব বলেন, ‘এ বিষয়ে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’