হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৩০ পিএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৫৬ পিএম
নাগরপুর চৌধুরীবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং ওঝা ঠাকুর ও হরনাথ স্মৃতি কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির। প্রবা ফটো
মন্দিরে চলছে পূজার্চনা, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাজনা। দর্শনার্থীরা প্রতিমা দেখতে আসছেন। পূজায় অংশ নিচ্ছেন পূজারি। নির্ধারিত সময় আজান শুরু হওয়ার আগেই ঢাকঢোল, মাইকসহ উচ্চৈঃস্বরে শব্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেসে আসে আজানের সুর। মুসল্লিরা মসজিদে আসেন। নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই আবার বেজে ওঠে মন্দিরের ঢাকঢোল। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা সদরের চৌধুরীবাড়ির আঙিনায় দুই ধর্মের মানুষ এভাবেই নিজ নিজ ধর্মীয় আচার ও নিয়ম পালন করে আসছে ৫৪ বছর ধরে।
সরেজমিনে চৌধুরীবাড়ি গেলে স্থানীয়রা জানান, ৯২ বছর আগে বাংলা ১৩৩৯ সালে ওঝা ঠাকুর ও হরনাথ স্মৃতি কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন পরেশ চন্দ্র ও শৈলেশ চন্দ্র দাস। এর পর থেকে প্রতি বছর ধুমধাম করে দুর্গাপূজা পালন করেন এলাকার সনাতন ধর্মের লোকজন। মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪০ বছর পর একই আঙিনায় নির্মাণ করা হয় নাগরপুর চৌধুরীবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। এ নিয়ে কখনও দ্বন্দ্ব বা সাম্প্রদায়িক হানাহানি হয়নি। প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয় স্থানটিতে।
মন্দিরে পূজা দিতে আসা লিপি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ৫৪ বছর ধরে এখানে পূজা করছি। পাশে মসজিদ ও মন্দির এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। মুসলিমরা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। আমরাও নামাজ ও আজানের সময় পূজা বন্ধ রাখি। কোনো দিন দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি, ভবিষ্যতেও আশা করি হবে না।’
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘জন্মের পর থেকে একই স্থানে আমি মসজিদ ও মন্দির দেখে আসছি। সনাতন ধর্মের লোকজন এখানে পূজা করেন। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই।’
মন্দির কমিটির সভাপতি লিটন কুমার সাহা পোদ্দার বলেন, ‘এখানকার মন্দিরটি বহু বছরের পুরোনো। পাশেই মসজিদ। আমরা হিন্দু-মুসলমান যার যার ধর্ম পালন করি। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের সহযোগিতা করেন। মুসলমানদের ঈদে আমরাও যেমন আনন্দ করি, আমাদের পূজায় মুসলমানরা আনন্দ করেন।’
চৌধুরীবাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবদুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘আমি ৩৭ বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করে আসছি। আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি নেই। দুই ধর্মের মানুষ পরস্পরকে সহযোগিতা করি।’ নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপ ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চৌধুরীবাড়ি। একই প্রান্তে মসজিদ ও মন্দির। নামাজের সময় নামাজ আদায় হয়, পূজার সময় পূজা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপিত হচ্ছে।’