× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্যায় সর্বহারার আহাজারি

‘বাবজান আংগর সব শেষ অইয়া গেছে’

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:২০ পিএম

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩১ পিএম

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ওঠায় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ওঠায় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

‘অনেক আশা লইয়া এইবার ধান লাগাইছিলাম। ফসলও বালা অইছিল। মনে করছিলাম আর কয়েক দিন পরেই তো আংগর ঘরে ধান আইব। পোলাপাইনরে বলছিলাম ক্ষেতের যত্ন নিতে। ধান বেইচ্ছা কিছু কর্য ছিল সেগুলো দিতাম। কিন্তু বাবজান আংগর সব শেষ অইয়া গেছে। ঘরে কিছু ধান ছিল, সেগুলোও পানিত ভাইসা গেছে। এহন আমরা কী খামু, কী পরমু। কইনছেন তো বাবা।’ এভাবে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মান্দাইল গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আনছর আলী। আনছর আলীর মতো এভাবেই একই কথা বললেন একই গ্রামের জালাল উদ্দিন, কমলা মৃং, নুরজাহান বেওয়া ও আইনুদ্দিনসহ অনেকে। তাদেরও চোখেমুখে কষ্টের ছাপ। 



প্রতিদিনের বাংলাদেশের ময়মনসিংহ প্রতিবেদক জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয় ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায়। শুক্রবার দিনভর ভারী বর্ষণ হয়। শনিবার ও রবিবারও বিভিন্ন মেয়াদে ভারী বর্ষণ হয়। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটের ৪০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে দুই উপজেলার লাখো মানুষ। সোমবার সকাল থেকে পাশের ফুলপুর উপজেলার সিংহশ্বের ও ছনধরা ইউনিয়নের সবকটি গ্রমে পানি ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া তারাকান্দা উপজেলায় কয়েকটি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এই চার উপজেলায় ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য খামার। পানির নিচে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘার আমন ধান। পানিবন্দি মানুষ গবাদিপশু ও শিশুসন্তানদের নিয়ে বিপদে পড়েছে। তাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে শৌচাগারের ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানির। সোমবার (৭ অক্টোবর) পানিবন্দি নারীদের বিভিন্ন দূর এলাকা থেকে কলসি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়। 

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলার সবকটি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে ও ভারতের পাহাড়ের ঢলে নেমে আসা পানি হঠাৎ বন্যায় রূপ নিয়েছে। এতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এই উপজেলায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য সরকার কর্তৃক চাল, নগদ টাকা ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সোমবার থেকে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। 

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক জানান, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় টানা তিন দিন বৃষ্টি থাকার পর সোমবার সকাল থেকে সূর্যের আলোর দেখা মিলেছে। বৃষ্টি না থাকায় উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, ঘোষগাঁও এবং গামারীতলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার তুষার জানান, এবারের বন্যায় আমাদের আমন ধানের ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর এবং সবজির ৩০ হেক্টর জমি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জহির উদ্দিন বলেন, উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার জন্য বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে স্কুল খুলে দেওয়া হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দৌলত উল্লাহ মুরাদ জানান, ধোবাউড়ায় ৩৩ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ধোবাউড়ায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

শেরপুর 

শেরপুর প্রতিবেদক জানান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে পানি কমলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সদর ও নকলা উপজেলা। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

শেরপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক এই বন্যায় শেরপুরের পাঁচটি উপজেলায় মোট ৪৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর রোপা আমন ধান, সবজিক্ষেত ১ হাজার ৬২ হেক্টর এবং ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৪ বস্তা আদা সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৩০ জন কৃষক।



শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবার জেলার ভোগাই নদের নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালীর ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনও বিপদসীমার সমান রয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি।

ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন ও উঠতি আমনের ক্ষেত। বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা অপর্যাপ্ত।

বলায়েরচর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন, দশআনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের এলাকার সবজি ক্ষেত, রোপা আমন ক্ষেত এবং মাছের প্রজেক্ট সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

রাজবাড়ী

রাজবাড়ী প্রতিবেদক জানান, টানা বৃষ্টিতে রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন প্রধান সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সড়কের পাশে নদী ও পুকুর থাকায় ওইসব এলাকায় এ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও চলাচলরত যানবাহন চালকরা।



সোমবার সকালে বালিয়াকান্দি-পাংশা সড়কের খাটিয়াগাড়া এলাকায় দেখা যায়, প্রধান এ সড়কটি ধসে নদীতে চলে যাচ্ছে। প্রায় ৩০০ ফুট এলাকায় এ ধসের কারণে ভারি যানবাহন চলাচল করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সড়কের গাড়াকোলা, শালমারা, বাহিরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে পুকুর থাকায় সড়ক ধসে গেছে। অনেক স্থানেই ইট, কাপড় টাঙিয়ে রেখেছেন স্থানীয়রা।

রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়ক, বালিয়াকান্দি-জামালপুর সড়ক, বালিয়াকান্দি-মধুখালী সড়ক, বালিয়াকান্দি-কালুখালী সড়ক, পাংশা, কালুখালী, গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশ ধসে গেছে।

নেত্রকোণা

নেত্রকোণা প্রতিবেদক জানান, ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে নেত্রকোণার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি। তবে জেলার কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে উব্ধাখালী নদীর পানি। 

এর আগে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এসব এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান ও ফিশারি পুকুর। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও গ্রামের উঁচু জায়গা বা ব্রিজে পরিবারসহ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নেয়। বন্যা পরিস্থিতিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয় জেলার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এ ছাড়া গত রবিবার সন্ধ্যায় জেলার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের নাটেরকোনা এলাকায় দুটি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেলে আশপাশ এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয় অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা।

জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, জেলায় আবাদকৃত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর আমন জমির মধ্যে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর জানান, ২০৩টি পুকুর ও ফিশারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা হয়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা