নেত্রকোণা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০২ পিএম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪৯ পিএম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল বন্ধ এবং তেমন কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নেত্রকোণার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধার দিকে সোমেশ্বরী, কংস, ধনু নদের পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে বইছিল। তবে কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল উব্ধাখালী নদীর পানি।
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে এসব এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান ও ফিশারি পুকুর। অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও গ্রামের উঁচু জায়গা বা ব্রিজে পরিবারসহ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নেন। বন্যা পরিস্থিতিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ ছাড়া গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় জেলার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের নাটেরকোনা এলাকায় দুটি বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে আশপাশ এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে স্থানীয় অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা।
সোমবার দুপুরে নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দ্রুতসময়ের মধ্যে বাঁধ মেরামত করা হবে বলে স্থানীয়দের আশ্বাস দেন।
জেলার দুর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগাড়া ইউনিয়নের শুকনাকুড়ি গ্রামের আব্দুল করিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাড়িঘর, পুকুরের মাছ ও আমন ধান সব পানিতে তলিয়ে গেছে। যদি পানি কিছুদিন স্থায়ী হয়, তাহলে এসবের কিছুই আর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।
একই এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, বাড়িঘর থেকে পানি ধীরে ধীরে নামলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। এখনও রাস্তাঘাট থেকে পুরোপুরিভাবে পানি সরেনি। এ ছাড়া অনেকের বাড়িঘরে এখন পানি থাকায় তারা আশ্রয়কেন্দ্র ঠাঁই নিয়েছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিজয়পুর পয়েন্টে কমছিল এবং এ সময় বিপদসীমার ৪২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল। একই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টেও পানি কমছিল এবং তা বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল। এ ছাড়া কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে পানি কমছিল এবং তা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে পানি বেড়ে উব্ধাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে ধনু নদের পানি বাড়লেও তা বিপদসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, জেলায় আবাদকৃত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর আমন জমির মধ্যে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্নকর্তা শাহজাহান কবীর বলেন, ২০৩টি পুকুর ও ফিশারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা হয়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হেসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতির জন্য জেলার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা বিতরণ করা হচ্ছে।