× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কোটি টাকার ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ করে লাপাত্তা অধ্যক্ষ, স্থবির পাঠদান

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৪৯ পিএম

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫০ পিএম

পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। ফাইল ফটো

পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। ফাইল ফটো

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘ দুই মাস থেকে স্থবির প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। তার বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দে মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার পৈত্রিক সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দুই মাস থেকে অনুপস্থিত অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই সহকারী অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে নিজের ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। এইচএসসি প্রথম বর্ষের ক্লাসে গিয়ে দেখা মিললো ৭ জন শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীদের দাবি- দিনে তিনটির বেশি ক্লাস না হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসে না প্রতিষ্ঠানে। দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস রুম পড়ে আছে শিক্ষার্থীশূন্য অবস্থায়। স্কুল বিভাগের শিক্ষকরা কেউ অলিখিত ছুটিতে, কেউবা অফিস রুমে অলস সময় কাটাচ্ছেন। কিছু শিক্ষার্থীর হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডাবাজিতে মুখর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৫ সালে যোগদানের পরেই মো. মাহেদুল আলম আওয়ামী লীগ সমর্থিত পায়রাবন্দ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও তৎকালীন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফয়জার রহমান খানের সঙ্গে ভাগাভাগি করে শিক্ষক, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয় ফয়জার রহমানের স্ত্রী নূরজাহান বেগমকে। প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমাকৃত অর্থ আত্মসাৎসহ নতুন করে এইচএসসির পাঠদানের অনুমতি নিয়েই শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে হাতিয়ে নেন আরও ৩৮ লক্ষাধিক টাকা।

স্থানীয়রা জানান, মিঠাপুকুরের সাবেক এমপি আশিকুর রহমান ও তার ছেলে রাশেক রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে নিজের মনমতো ম্যানেজিং কমিটি করে দীর্ঘদিন থেকেই প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন অধ্যক্ষ। আশিকুর রহমানের পর নতুন এমপি জাকির হোসেন সরকার নিকটাত্মীয় হওয়ায় আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ার সুবাদে ছাত্র ছাত্রীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রতি বছরে হাতিয়ে নিতেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সরকার পতনের পর নিজের অপকর্মের ভয়ে প্রতিষ্ঠানে আসেননা অধ্যক্ষ।

অভিভাবক নূরুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ দীর্ঘ দুইমাস থেকে প্রতিষ্ঠানে না আসায় কোনো ক্লাস ঠিকমত হচ্ছে না। আমার মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ে। দিনে দুই তিনটার বেশি ক্লাস হচ্ছে না। দুইমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো উপজেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের সন্তানদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এরা।

কলেজ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ৭ লক্ষ টাকায় শিক্ষক হিসেবে ঢুকছি। কোন বেতন নাই। একেকজন একেক রকম টাকা দিয়ে ঢুকছে এখানে। কারোই বেতন হয় নাই। ২০১৫ সালে স্কুলে যাদের ঢুকাইছিল তাদের বেতন হওয়া দেখে ভাবছিলাম আমাদেরও বেতন হবে। কিন্তু আমাদের ছেড়ে উনি পালাইছেন। যত অন্যায় উনি করছেন ক্ষমতার দাপটে, এখন প্রতিষ্ঠানে এলে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে। ওনাকে ফোন দিলেও ধরেন না। এখন আমাদের কী হবে আল্লাহ ভালো জানেন।

পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক রাজ্জাকুর রহমান রাজু জানান, প্রতিষ্ঠানকে এই অধ্যক্ষ শেষ করে দিয়েছে। প্রতিবছর কাগজ কলমে উনি আমাকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে হল সুপার রাখলেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। আপনারা সবাই জানেন পরীক্ষার সময় এই কেন্দ্রে কী হতো। অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন না থাকায় এলাকাবাসীর অনুরোধে আমি সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করছি। নিয়োগ বাণিজ্যসহ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়েই আমি অবগত নই। এই প্রতিষ্ঠানে স্কুল বিভাগে ১৬ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৫০ জন। কলেজ বিভাগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

কলেজ বিভাগের রেজিস্ট্রার খাতা সূত্রে জানা যায়, কলেজে ৯০ জন শিক্ষার্থী, নন এমপিও ৪ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়াও চুক্তিভিত্তিক কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া রয়েছে শিক্ষক ঘাটতি পূরণে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মমিন মন্ডল জানান, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সভাপতি ইউএনও স্যার। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।’

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন থেকে ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত রয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর অন‍্য বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা