প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৫৫ পিএম
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার ঘোষগাও ইউনিয়নের জিগাতলা এলাকায় নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। প্রবা ফটো
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ইউনিয়নগুলো ছাড়াও নদীতীরবর্তী অন্যান্য ইউনিয়ন ও নিম্নাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে পাহাড়ি নদীগুলোতে পানির তীব্রতা কিছুটা কমে এলেও ভাটি অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বন্যায় এ জেলায় অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও অন্তত একজন। নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের অভয়পুর গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে হাতেম আলী (৩০) ও সহোদর আলমগীর (১৬) চেল্লাখালী নদীর ভেঙে যাওয়া পানির স্রোতে নিখোঁজ হয়। পরে (শনিবার) পানি কিছুটা কমে আসায় বিকালে নন্নী কুতুবাকুড়া গ্রামের ধানক্ষেত থেকে ওই দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করা হয়। একইভাবে শুক্রবার বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ওমিজা বেগম। একই দিন সন্ধ্যায় নয়াবিল ইউনিয়নের খলিসাকুড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী। এ ছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন।
জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় অন্তত ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি পানিতে নিমজ্জিত আছে সবজিক্ষেতসহ চলতি আমন ধানের মাঠ। হাজার-হাজার একর জমির ফসল পানিতে ডুবে রয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসা, খাদ্য ও আবাসন সংকটে অনেকে নারী ও শিশুদের নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এদিকে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে শুক্রবার থেকেই কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। শনিবার দিনভর স্পিটবোট, নৌকা, ভেলা, টিউব ইত্যাদি নিয়ে চলে বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধার অভিযান।
বন্যায় শুকনা খাবারসহ অন্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বানভাসিদের মাঝে। এসব কাজে অংশ নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি, মানবাধিকার সংস্থা আমাদের আইন, ছাত্র শিবির, ইসনাফ, নন্নী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলহাজ একেএম মাহবুবুর রহমান রিটনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
নোয়াখালী
নোয়াখালী প্রতিবেদক জানান, ভারী টানাবর্ষণে ফের ডুবেছে নোয়াখালী । জলাবদ্ধতায় আটকে আছে ১২ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক। বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। শনিবার সকালে সরেজমিনে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলগুলো ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। জীবিকার তাগিদে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছেন রিকশাচালক ও শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষেরা।
জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, নোয়াখালীর ৮ উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ হাজার ১৮৫ জন মানুষ।
সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. সুজন বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে আবার বেড়েছে। গত মাসেও এমন অবস্থা হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন কেউ খবর নেবে না আর সহযোগিতাও করবে না।
ময়মনসিংহ
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও ধোবাউড়া প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলার দুই দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। ধোবাউড়ায় বানের জলে ভেসে গেছে বেশ কিছু বাড়িঘর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুটি উপেজলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। শনিবারও বন্যার অবনতির কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দুটি উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নেত্রকোণা
নেত্রকোণা প্রতিবেদক জানান, নেত্রকোণার প্রধান নদ-নদীগুলোর সব পয়েন্টেই ধীরগতিতে পানি বাড়ছে। এর মধ্যে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে সোমেশ্বরী, কংস ও উব্ধাখালী নদীর পানি। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলাবাসী। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার জারিয়া জাঞ্জাইল এলাকায় ২৫০ মিলিমিটার ও দুর্গাপুর এলাকায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জামালপুর
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিবেদক জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী ডাংধরা ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর এলাকার ১৪টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে সানন্দবাড়ী ব্রিজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ শত শত স্থাপনা। নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চাঁদপুর
চাঁদপুর প্রতিবেদক জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বছরের সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ২৭ মে জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৫৭ মিলিমিটার।
রাজশাহী
রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, জেলার বাঘা উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। পদ্মাঘেঁষা ইউনিয়ন হওয়ায় প্রতি বছর এ অঞ্চলে কমবেশি বন্যা হয়ে থাকে। ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। সাম্প্রতিক বন্যায় হঠাৎ করে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে কালিদাসখালি, লক্ষ্মী নগর, আতার পাড়া ও পলাশী ফতেপুরসহ বেশ কিছু এলাকা। ফলে প্রায় দেড় হাজার বিঘা ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার-হাজার মানুষ। কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুল ও মসজিদের। এ ছাড়াও শত শত বিঘা ফসলের জমি পানির নিচে চলে গেছে।
দুই পাশে নদী। মাঝ খানের উঁচু জায়গায় পানিবন্দি বাঘার লক্ষ্মী নগর চরের শতাধিক পরিবার। ক্রমাগত বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহের কারণে এখন তারা চরমভাবে বিপদাপন্ন। শুধু লক্ষ্মীনগর নয়, চরাঞ্চলের সকল নিচু এলাকায় এখন পানি জমে বন্যায় পরিণত হয়েছে। এর ফলে ডুবে যেতে শুরু করেছে জমির ফসল। একই সঙ্গে কোনো-কোনো এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন।
মানিকগঞ্জ
সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিবেদক জানান, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় টানা কয়েকদিনের বর্ষণে মাঠে রোপা আমন, নাসিক জাতের পেঁয়াজ, টমেটো, মাষকলাই, সবজি, বেগুন, পেঁপে, মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে গরু-ছাগল নিয়েও বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার জামির্তা, জয়মন্টপ, বায়রা, বলধরা, চান্দহর, ধল্লা ইউনিয়নের ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া নষ্ট হওয়ার পথে শত শত বিঘা জমির ফসল। বকচর গ্রামের কৃষক সোকেল মিয়া বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমির টমেটো এই পর্যন্ত তিনবার বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
সিঙ্গাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে ফসলের চূড়ান্ত কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা কৃষকদের নালা কেটে পানি বের করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’