নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৪৯ পিএম
পাওনাদারদের নামে এবার মিথ্যা পাল্টা মামলা করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর মহাদেবপুরের আলোচিত ওসমান অ্যাগ্রো (প্রা.) লিমিটেড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মহাদেবপুর থানায় মামলাটি করেছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকার পরও নিজেকে দেউলিয়া দাবি করা ওসমান গণির জামাতা শওকত আল ওসমান। ভুক্তভোগী পাওনাদার ব্যবসায়ীদের দাবি আগের ওসি সত্য জেনেও বদলি হওয়ার শেষ মুহূর্তে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলাটি গ্রহণ করেছে। অবিলম্বে মিথ্যা কাউন্টার মামলাটি প্রত্যাহার ও পাওনা টাকা ফেরতসহ ওসমান গণির বিচারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
ধান বিক্রয়ের পাওনা টাকা দেওয়ার নামে গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীদের ডেকে মারধর ওসমান অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ১০ ব্যবসায়ী আহত এবং ১১টি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলা হয়। ঘটনার দিন ব্যবসায়ীদের পক্ষে পাওনাদার ছামিউল আলম ওসমান অ্যাগ্রোর মালিক ওসমান গণির বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তিন দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর ওসমান গণির জামাতা শওকত আল ওসমান একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। পাল্টা মামলায় পত্নীতলা থানার মল্লিকপুর গ্রামের আলহাজ জাকের আলীর ছেলে আহসান হাবিবকে (৫২) ও বদলগাছী থানার পূর্বখাঁপুর গ্রামের মৃত কালামের ছেলে ছামিউল আলমসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।
শনিবার দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে জানতে পেরে আসামিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। পাল্টা মামলাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে অনেকেই বলেন পাওনা টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্যই এই মামলাটা করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ আছে, আসামিগণ ধান ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে বাদীর শ্বশুরের মিলের ধান ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পাওনা আছে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে আপস মীমাংসা হয়েছে। তা সত্ত্বেও আসামিগণ (পাওনাদার ব্যবসায়ীরা) অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জন মোটরসাইকেল ও ভটভটি যোগে এসে ধারালো হাঁসুয়া, লোহার রড, বাঁশের লাঠি নিয়ে মিলে মেনগেট ভাঙচুর করে এবং ভিতরে ঢুকে মিলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। সবাইকে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করতে থাকে।
এ সময় ১নং আসামি আহসান হাবিব এর হাতে থাকা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে মিলের শ্রমিক মহসীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মারে। মহসীন প্রতিহত করলে তার বাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়া আসামি ছামিউল আলম লোহার রড দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে মাথা জখম হয়।
ভিকটিম আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ওসমান অ্যাগ্রোর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি একটি মার্কেটে নাইট গার্ডের চাকরি করেন। ঘটনার সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে একটি ইটের টুকরা তার মাথায় লাগে। কিন্তু মামলায় ছামিউল আলমের লোহার রড়ের আঘাতে মাথা ফেটে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে মিলের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি এবং ক্যাশ ড্রয়ার ভেঙে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করার অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা ওসমান গণির নিকট ৩৫ কোটি টাকা পাওনা আছে। সচেতন মহল মনে করছেন পাওনাদারদের আতঙ্কিত ও ভয়ভীতি দেখাতেই এই পথ বেছে নিয়েছেন ওসমান গণি। সে কারণে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারসহ পাওনাদারদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তারা।
ভিকটিম আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি বাজারে নাইট গার্ডের চাকরি করি। মার্কেটে মালিকের সঙ্গে দেখা করতে ওদিকে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় হঠাৎ করে একটি ইটের টুকরা এসে আমার মাথায় লাগে। এতে কিছুটা অংশ কেটে যায়। আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি।
পাওনাদার আবু তালেব বলেন, মহসিন নামে ওসমান অ্যাগ্রোর যে শ্রমিক আহত হয়েছে তিনি মেশেনারিজ ফোরম্যান। ঘটনার দুই দিন আগে কাজ করতে গিয়ে চাপা লেগে তার আঙুল জখম হয়েছে অথচ এই পাল্টা মামলায় হাঁসুয়া দিয়ে কোপ মেরে জখম করা হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে।
আহসান হাবিব বলেন, টাকা দেওয়ার নামে ডেকে নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে ওসমান গণি। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা থানায় একটি মামলা করি। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পর পাল্টা মামলা করা হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ওসি রুহুল আমিন বদলির শেষ সময়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় এ মিথ্যা মামলা গ্রহণ করে চলে গেছেন। আমরা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাশমত আলী জানান, আমি আসার আগে কী হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য থাকবেই, আমরা তদন্ত করে প্রকৃত যে ঘটনা পাব সেই মোতাবেক প্রতিবেদন দেব।