ছাত্র আন্দোলনে নিহত
নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৩ পিএম
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে রাজধানীর বাড্ডায় বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন নোয়াখালী সদর উপজেলার মো. রায়হান। হঠাৎ মাথায় ও পিঠে গুলি লাগে তার। ঢলে পড়ে যায় মাটিতে। আর মা বলে ডাক দেয়নি আমেনা খাতুনকে। একমাত্র ছেলেসন্তানকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নিহত রায়হানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা। এ সময় ইউএনওকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদেন আমেনা খাতুন। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ পরিবারটির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি ত্রাণ ও নগদ অর্থসহায়তা দেন। পাশাপাশি সব সময় পাশে থাকার ঘোষণা দেন। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহনেওয়াজ তানভীরসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মো. রায়হান সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন-আমেনা দম্পতির একমাত্র ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, রায়হান এ বছর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন বাড্ডায় একটা বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটা মেসে থাকত। আর তার মা থাকেন নোয়াখালীতে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে রায়হান সবার বড়। গত ৫ আগস্ট বাড্ডায় বিজয় মিছিলে যোগদান করলে গুলিবিদ্ধ হয় রায়হান। পরদিন দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রায়হানের বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গোলাগুলির খবর পেয়ে ছেলেকে ফোন দেই। তার ফোন এক ছেলে ধরে বলে আঙ্কেল রায়হানকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি হাসপাতালে হাসপাতালে পাগলের মতো খুঁজি। শেষে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মরদেহ পাই। ছেলেটার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না। আনন্দ মিছিলে যোগ দেওয়া তার কাল হয়েছে।’
ইউএনও আখিনূর জাহান নীলা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রায়হানের মা আমাকে ধরে অঝোরে কেঁদেছেন। তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন। তার দুঃখ কেউ বুঝবে না। এটা অনেক কঠিন বিষয়। রায়হানের পরিবারের কথা শুনে উপহার ও আর্থিক সহায়তা করেন জেলা প্রশাসক।’
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্ররা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মা-বাবা সন্তানের শোকে কাতর হয়ে আছেন। শোকাহত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই। শুধু তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। আর সামান্য উপহার দিয়েছি। জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।’