চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১৩ পিএম
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরিফ (৪৬)। গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে নিজ ঘর থেকে বেরিয়ে ফেরেননি। এই ঘটনায় পেকুয়া থানাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনও হদিস মেলেনি এই শিক্ষকের। পরিবারের দাবি-তাকে গুম করে ফেলা হয়েছে। নিখোঁজের আটদিন পার হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্বজনদের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে প্রশাসনের আন্তরিক ভূমিকা চান নিখোঁজ শিক্ষক মো. আরিফের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু।
মো. আরিফ পেকুয়া উপজেলার ৫নং ওয়ার্ডের আন্নর আলী মাতব্বর পাড়ার প্রয়াত বজল করিমের মেজ ছেলে। তার সাতবছর বয়সী মেয়ে মাসতুরা আফসিন রোশদা এবং পাঁচ বছর বয়সী আবদুল্লাহ মামনূন আকাইদ ও ৯ মাস বয়সী মিকদাদ মোহাম্মদ নামে দুই ছেলে রয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্থানীয় পেকুয়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করার কথা জানিয়ে মেহবুবা আনোয়ার লাইজু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার তিন ছেলে-মেয়ে এখন শুধু আব্বু আব্বু বলে কান্নাকাটি করছে। আমার স্বামীকে আমি অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই। আমার স্বামীকে গুম করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। আমাকে বারবার তারা মোবাইলে হুমকি দিচ্ছে আমার স্বামীর ক্ষতি করবে। এই অনিশ্চিয়তা, শঙ্কা থেকে আমি মুক্তি চাই। প্রতি মুহূর্ত আমার জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। আটদিন হয়ে গেল; এখনও আমার স্বামী নিখোঁজ। আমি মনে করি, প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ নিলেই আমার স্বামীকে আমরা ফিরে পাব। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নিখোঁজ মো. আরিফের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু বলেন, ‘আমার স্বামীকে কখনও কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাধ করতে দেখিনি। তাই তেমন কারো সঙ্গে বিরোধও নেই। তবে পেকুয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পৈত্রিক জায়গা সম্পত্তির বিরোধ ছিল। ’
নিখোঁজ মো. আরিফের সন্ধান চেয়ে গতকাল শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনিস্টিটিউশন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধন থেকে অপহৃত মো. আরিফকে অক্ষত অবস্থায় তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদ আরিফকে খুঁজে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর আমিরুল মোস্তফা, মোহাম্মদ আরিফ আহমেদ, মো. মাহফুজুল হক, এডভোকেট আবদুল মান্নান, বাবলা বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন, এডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুচ, মো. রফিক আহমেদ, মো. মোসলেহ উদ্দিন, মো. সাজ্জাদুল হক, মো. নুরুল ইসলাম, বেলাল মাহমুদ, এডভোকেট নাজিম উদ্দীন, ড. আবদুল্লাহ আল মাসুদ, মো. মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে মো. আরিফ ঘর থেকে বের হন। এরপর অনুমানিক রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘরে না ফেরায় তাকে ফোন করা হয়। কিন্তু রিং হলেও ফোন ধরেননি। অনেক খোঁজাখুজির পর না পেয়ে পেকুয়া থানায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ ডায়েরি করে আসেন তার স্ত্রী মাহবুবা ইসলাম লাইজু। ওইদিন বাদ এশা এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার স্বামীর জমি-জমা সংক্রান্তে বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে সালিশের কথা ছিল। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতস্থল থেকে আমার স্বামীর নম্বর থেকে ফোন করে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর রাত ২টার দিকে আরিফের স্ত্রী লাইজুকে ফোন করে চট্টগ্রাম নগরীর ফ্রিপোর্ট এসে স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তারা।
পরদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) নগরীর ফ্রি পোর্ট এলাকায় গিয়ে স্বামীকে পাননি আরিফের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু। না পেয়ে হতাশ হয়ে ফেরার পথে দুপুর আড়াইটায় আবার ফোন করেন অপহরণকারীরা। তখন মুক্তির জন্য ৩৫-৪০ লাখ টাকা দাবি করেন তারা। এসব মুক্তিপণ নিয়ে পরদিন বিকাল ৪টার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন ব্রিজ পুলিশ বক্সের সামনে যেতে বলেন অহরণকারীরা। পাশাপাশি তখন তারা হুমকি দিয়ে বলেন ‘কোন চালাকি অথবা পুলিশ, র্যাব কিংবা আর্মির দ্বারস্থ হলে তোর স্বামীর লাশ পাবি। এরপর থেকে এখনও হদিস মেলেনি এই স্কুল শিক্ষকের। পরে এই অপহরণের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে নিখোঁজ আরিফের ছোট ভাই মোহাম্মদ রিয়াদুল ইসলাম পেকুয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।