× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কই গেল ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের ৩১ কোটি টাকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৭ পিএম

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৮ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাকা ঘাট। প্রবা ফটো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পাকা ঘাট। প্রবা ফটো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছরই আগ্রাসী পদ্মার ভাঙনে নদীর তীরবর্তী মানুষের ভিটেমাটিসহ আবাদি জমি বিলীন হয়। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্পের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে বাঁধ দেয়। কাজটি করা হয় বছরের পর বছর। কিন্তু তা নামমাত্র। আর সেই কাজটাও করা হয় বর্ষার সময়। ফলে স্রোতে ভেঙে যায়।

ভারতের গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী হয়ে। এই নদীর তীরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের বসবাস। প্রতিবছরই কীর্তিনাশা রূপ নিয়ে ফেরে পদ্মা, আর এতেই ভাঙনের শিকার হয় তীরবর্তী বাসিন্দারা। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের মানুষ নদীভাঙনের কবলে। ভাঙন আতঙ্কে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে তারা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো।

পাউবোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হয়েছে। এতে প্রায় ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৫ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার জিও ব্যাগ এবং ১৩ হাজার ৩৩৩টি জিও টিউব ফেলা হয়েছে। আর সেগুলো স্রোতে ভেসে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, যখন ঠিকাদার নিয়োগ হয় তখন প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই প্রায় ৫ শতাংশ টাকা কর্মকর্তাদের দিতে হয়। নদীভাঙন রোধ প্রকল্পের অর্থ কর্মকর্তাদের দেওয়ার ‘সুযোগ’ নেন ঠিকাদারও। এই সুযোগে গুটিকয়েক বস্তা ফেলে প্রকল্পের দায়সারা কাজ করেন ঠিকাদাররা।

অভিযোগ আছেÑ ঠিকাদার যেখানে নদীতে বাঁধ দেওয়ার সুযোগ পাই। সেই ঠিকাদারের মদদেই বাঁধ রক্ষাকাজের অদূরেই ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হয়। আর এসব বালু বস্তা ও টিউবে ভর্তি করে বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে নদীভাঙন রোধ হওয়ার বদলে আরও বাড়তে থাকে। এসব কিছু জেনেও চুপ থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিবগঞ্জ উপজেলার বোগলাউড়ি এলাকার পদ্মা নদীর পাঁকা ঘাটে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলার কাজ পেয়েছেন সাজেদা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. সাইফুল ইসলাম রাজু। ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় এই প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা।

সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙন রোধে নদীর তীরে বস্তা ও টিউব ফেলেছেন ঠিকাদার। কিছু বস্তা থাকলেও বেশিরভাগই পানির স্রোতের তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখনও অনেক বস্তা নদীর তীরে বালুভর্তি করে রাখা আছে। প্রকল্পের টাকা দিয়ে কেনা বস্তাগুলো ‘অকেজো’ হয়ে পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঠিকাদারদের যতগুলো বস্তা ফেলার কথা ততগুলো না ফেলে কাজ বন্ধ করেছে। সরকারি টাকার ওপর দয়ামায়া না করে নিজের মতো কাজ করেছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন শরিফুল ইসলাম। তিনি নদীপাড়ে পড়ে থাকা জিও ব্যাগগুলোর দিকে হাত উঁচিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেখেন, ওইখানে ঠিকাদার কাজ করছিল। গুটিকয় বস্তা ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে যদি নদীর ধারে এসব বস্তা ফেলা যায় তাহলে কাজটা টেকসই হবে। পানির স্রোতে বস্তাগুলো বিলীন হবে না।’

পদ্মাপারের আরেক বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মার ভাঙন সৃষ্টি হলে যে পরিমাণে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে বাঁধ দেওয়ার কথা, তা দেওয়া হচ্ছে না।

পদ্মায় পানি কমলে আবারও কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘আমাদের কাজ এখনও শেষই হয়নি। পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পানি কমলে আবার কাজ শুরু হবে। নদীতে বস্তা ফেলার আগেই টাস্কফোর্স সেগুলো গণনা করে। ফলে কারচুপির সুযোগ নেই।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, পদ্মায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও বস্তা ফেলার কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছোট থেকে বড় কর্মকর্তারা আর্থিক লেনদেনে জড়িত। কাজ শুরুর আগেই তাদের টাকা দিতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আলী কাওছার অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, পদ্মার ভাঙনে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে কী পরিমাণে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হয়েছে, তার একটি তথ্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নদীতে পানির স্রোতের তোড়ে বস্তাগুলো স্থির হয়ে থাকে না, এটাই সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি নদীভাঙন দেখা দেয় বর্ষা মৌসুমে। ফলে মন্ত্রণালয় থেকে এ সময়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে কাজ করার সুযোগ থাকে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা