শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২৩ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫১ পিএম
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই চারঘাটের কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জমেছে হাঁটুপানি। প্রবা ফটো
রাজশাহীর চারঘাটে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবুও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। বিদ্যালয়ের মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতার পাশাপাশি একটু বৃষ্টিতেই অফিস ও ক্লাসরুমে হাঁটুপানি জমে। প্রতিদিন পানিতে ভিজে ক্লাসে যেতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয় দুটি হলো- চারঘাটের নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে বিদ্যালয় দুটি অবস্থিত। দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮০০।
সরেজমিন বিদ্যালয় দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জায়গাও শুকনো নেই। দ্বিতীয় তলার কয়েকটি রুমে গাদাগাদি করে চলছে ক্লাস। ওই বিদ্যালয়ের নিচলায় অফিস ও ক্লাস রুমের ভেতরে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ জরুরি কাগজপত্র। নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও হাঁটুপানি। পানি মাড়িয়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করতে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের খেলার মাঠ ও পুকুর নিয়ে বাণিজ্য এবং অপরিকল্পিত সংস্কারকাজের জন্য মাঠ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজ এমন অবস্থা। নালা বন্ধ করে নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয় পুকুর খনন করেছে। এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পুকুর সংস্কার করে ভাড়া দিয়ে বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা লাভের আশায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বিদ্যালয় দুটিতে।
নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে বিদ্যালয়ের মাঠটি সংস্কার করা হয়। পরের বছর আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় মাঠের পাশের পুকুরপাড় বেঁধে মাঠ সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার ও বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারে আবারও ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের বরাদ্দে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচে দুই বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮০ হাজার টাকায় মাঠের পাশের ড্রেন সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারও রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় মাঠের পাশে রাস্তা ও মাঠ সংস্কার করা হয়েছে।
অথচ পাঁচ বছরে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার খরচ করে সংস্কারকাজ করার পরও বছরের ৬ মাস ধরে মাঠে জমে থাকে পানি। একটু বৃষ্টিতেই ক্লাস রুমে পানি ঢুকে সৃষ্টি হয় ভোগান্তির।
কামিনী গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই আমার বিদ্যালয় ডুবে যাচ্ছে। ক্লাস রুম ও অফিসে পানি ঢুকছে। পার্শ্ববর্তী নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কার করার পর থেকে এ অবস্থা। তাদের সংস্কারকাজে পানিপ্রবাহের নালাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বরং পুকুর সংস্কারের আগে আমার বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করত না। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়ে আশ্বাস ছাড়া সমাধান হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আতাউর রহমান বলেন, দুই বিদ্যালয়ের মাঠ যেন টাকা কামানোর মেশিন। প্রতি বছর নানা প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতা যায় না। হয়তো পরের বছর আবার প্রকল্প নেওয়ার জন্য ইচ্ছে করে জলাবদ্ধতা নিরসন করেন না তারা। এই দুই বিদ্যালয়ে সারা বছরই বন্যা লেগে থাকে।
নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয় দুটির করুণ অবস্থা। জলবদ্ধতার কারণ দেখিয়ে যে যার মতো করে প্রকল্প নিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ দেখিয়েছে। নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয় সামান্য লাভের জন্য পুকুর খনন করে ভাড়া দিয়ে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
নন্দনগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আখন্দ শিবলী বলেন, বিদ্যালয়ের ভালোর জন্যই মাঠ ও পুকুর সংস্কার করেছি। কিন্তু পুকুরের পাশের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সংস্কারকাজে অনিয়ম হয়নি। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করছি।