শফিক সরকার, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাইপাস সড়কের কাজ এভাবেই পড়ে আছে কয়েক মাস ধরে। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মুক্তাগাছায় বাইপাস সড়কের কাজের সময় শেষ হয়েছে জুন মাসে। এর পর আবার সময় বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। রোদ থাকলে উড়ছে ধুলাবালি, আর বৃষ্টি হলে ছোট-বড় গর্তে আটকে পড়ছে যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়ক দিয়ে সিলেট, চট্টগাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে সংযোগ গড়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের সব জেলার। মুক্তাগাছার ওপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। এতে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় মুক্তাগাছা শহরে। যানজট নিরসনে মুক্তাগাছাবাসীর দীর্ঘদিনর দাবি ছিল একটি বাইপাস সড়কের। দাবির মুখে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশাপাশি মুক্তাগাছার বাইপাস সড়কের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় মধুপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এন-৪০৩) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প পাস হয়। এ প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। বাইপাস সড়ক হচ্ছে মুক্তাগাছার সাতাশিয়ার রকিব ফিলিং স্টেশন থেকে ভাবকীর মোড় পর্যন্ত। এর দূরত্ব ধরা হয়েছে ছয় কিলোমিটার।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের জিরোপয়েন্ট থেকে মুক্তাগাছার বাইপাস সড়ক হয়ে মধুপুর পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়কটি ৩৪ ফুটে প্রশস্ত করার কথা। সড়কটি এর আগে ছিল ১৮ ফুট। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে শুরু হয় সড়ক প্রশস্তের কাজ। আর ওই বছরের শেষে শুরু হয় বাইপাস সড়কের কাজ। আর কাজ শেষ করার কথা ছিল এ বছরের জুন মাসে। ময়মনসিংহ থেকে মধুপুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সংস্কারের মাসুদ হাইটেক বিল্ডার্স, রিলায়েবুল বিল্ডার্স ও সালেহ আহমেদ এন্টারপ্রইাজÑ এই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বাস্তবায়ন করছে। বাইপাস সড়কের ছয় কিলোমিটার সড়ক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। সাতাশিয়া অংশের বাইপাসের কাজ দ্রুতগতিতে চললেও ভাবকীর মোড় অংশের কাজ হয়েছে একদম কম। শুধু মাটি ফেলা হয়েছে এই অংশে। ভাবকীর মোড় অংশের কাজ করছে মাসুদ হাইটেক বিল্ডার্স। আর মুক্তাগাছার সীমানা থেকে মধুপুর পর্যন্ত কাজ করছে সালেহ আহমেদ বিল্ডার্স।
ময়মনসিংহ থেকে মধুপুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীর জেলাখানা থেকে খাগডহর পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ করা হয়নি। এই এলাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সড়কের পাঁচমাইল থেকে মনতলা হাট পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। সড়কের মুক্তাগাছার অংশের সাতাশিয়া এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ এলাকায় বড় বড় গর্তে আটকে পড়ছে যানবাহন। এ ছাড়া মুক্তাগাছার ভাবকীর মোড় থেকে মধুপুর পর্যন্ত সড়কের অধিকাংশ কাজ করা হয়নি। এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরও বেশি। রোদ থাকলে ধুলাবালি আর বৃষ্টিতে ছোট ছোট গর্তে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।
নগরীর কাঠগোলা এলাকার বাসিন্দা জগলুল পাশা রুশো বলেন, সড়ক সংস্কার শেষ না করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধুলাবালি আর কাদায় সড়কে চলা বড় দায় হয়ে পড়েছে। একটি সড়কের কাজ এভাবে বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না। দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে মাসুদ হাইটেক বিল্ডার্সের কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র জানান, বাইপাসের জমি অধিগ্রহণ ও সময়মতো ইটবালি সংগ্রহ করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ে তারা কাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরুর কথা জানান তিনি।
সওজ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মধুপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও মুক্তাগাছার বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ঠিকাদাররা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেননি। তাদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে কাজ শুরুর। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।