অরুপ রতন, বগুড়া
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১৭ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১৯ পিএম
প্রতীকী ছবি
বগুড়ায় সেপ্টেম্বর মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মূলত পূর্ব শত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি এবং ছিনতাইয়ের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলায় গড়ে তিন দিন পর পর একটি করে খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো ভূমিকার অভাবকে দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকেরা। তবে পুলিশের দাবি, এখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জেলায় সেপ্টেম্বর মাসে হত্যাকাণ্ডগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৮টিতে খুনিরা ধারাল দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আর বাকি চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গণপিটুনি ও মারধরে। নিহতদের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, খুনিরা হত্যাকাণ্ডে সহজেই পাওয়া যায়। এমন দেশীয় অস্ত্র যেমন চাপাতি, হাসুয়া, বার্মিজ চাকু, কুড়াল ব্যবহার করেছেন।
গত মাসে হত্যাকাণ্ডের মধ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নে দুলাল হোসেন নামে এক মুদি ব্যবসায়ীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পরের দিন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে একদল দুর্বৃত্ত শরীরের একাধিক স্থানে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদা না পেয়ে শহরের জয়পুরপাড়া এলাকায় রানা মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বখাটেরা। এ সময় নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগমকে কুপিয়ে জখম করে তারা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদরের কৈচড় মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে রিয়াদ নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের ছোট মণ্ডলপাড়ায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার ও তার সহযোগী স্বপন মিয়াকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর শাজাহানপুর উপজেলার কলমচাপর গ্রামে আফসার আলী নামে এক অটোচালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এছাড়া সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর বগুড়ার কাহালু উপজেলার লহরাপাড়া এলাকায় আব্দুল বাছেদ নামে এক মুদি দোকানিকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তার দুই পায়ের রগও কেটে দেয় তারা। এছাড়াও ১৮ সেপ্টেম্বর শেরপুরে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে আসিফ প্রামাণিককে হত্যা, গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্টু মিয়া নামে এক বৃদ্ধকে জমিজমা সংক্রান্ত জেরে মারপিটে হত্যা, ৯ সেপ্টেম্বর রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল মিজান হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে লেদো নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের ভেতরে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডে খুনিরা ধারাল চাপাতি, কুড়াল ও চাকু ব্যবহার করছে। এসব অস্ত্র যে কেউ সহজেই কিনতে পারে এবং ইচ্ছামত তৈরি করেও নিজের কাছে রাখতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অস্ত্র উদ্ধার বা বিক্রি বন্ধ ঠেকাতে পারে না। কারণ যারা কাছে রাখছে তারা মাংস কাটা অথবা সবজি কাটা অথবা গাছ ও খড়ি কাটার অজুহাত দেখায়। ফলে সহজেই তারা এসব দেশীয় অস্ত্র হত্যাকাণ্ডসহ বড় বড় অপরাধে ব্যবহার করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন হত্যাকাণ্ডগুলো তদন্ত করি তখন এসবে জড়িত যাদের নাম উঠে আসে তাদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত অথবা স্বল্পশিক্ষিত। এক শ্রেণির মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে দেশীয় অস্ত্র তুলে দিয়ে সহজেই তাদের ব্যবহার করছে।’
বগুড়া সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কে জি এম ফারুক বলেন, ‘বগুড়ায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডে বগুড়াবাসী আতঙ্কিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে এই অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে।’
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, ‘জুলাই মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়ায় হত্যাকাণ্ড কমেছে। এই মাসে এখনও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি৷ অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থামাতে পুলিশ শিগগিরই কঠোর অভিযান শুরু করবে। আমরা বগুড়াবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’