শরীয়তপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১৫ পিএম
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা সদরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বেইলি ব্রিজের (পদচারী সেতু) একটি স্প্যান বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে গেছে। এতে নড়িয়া উপজেলা শহরের সঙ্গে চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় বাল্কহেডটি জব্দ করার পাশাপাশি দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে উপজেলার নড়িয়া বাজারসংলগ্ন কীর্তিনাশা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
নড়িয়া-জাজিরা সড়কের কীর্তিনাশা নদীতে থাকা ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশ দিয়ে মানুষের হেঁটে চলাচলের জন্য ওই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টার দিকে একটি বালুভর্তি বাল্কহেড সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে সেতুর দুটি স্প্যান ভেঙে পড়ে যায়। এ সময় সেতুর ওপরে কাজ করা অবস্থায় এক নির্মাণশ্রমিকসহ তিনজন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাল্কহেডের চালক মো. হাসান হাওলাদার ও সোহেল কিবরিয়া নামে দুজনকে আটক করে।
নড়িয়া পৌর এলাকার হাসেম বেপারি, রুহুল মিয়া, রনি খান বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার কাজ করার কারণে নির্মাণাধীন ফুটওভার ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে। আর সেতুর কাজও পিছিয়ে গেল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলা সদরের কীর্তিনাশা নদীর পূর্ব তীরে উপজেলা সদর ও পশ্চিম তীরে মোক্তারের চর, রাজনগর, নশাসন ও জপসা ইউনিয়ন। এ ছাড়া জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন রয়েছে। নড়িয়া উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে ওই ইউনিয়নগুলো ও জাজিরায় যোগাযোগের জন্য ১৯৯৭ সালে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ভাষাসৈনিক গোলাম মাওলা সেতুটি নির্মাণ করে এলজিইডি।
সেতুটির আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীভাঙনের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে ২০১৫ সালে সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে এলজিইডি। এরপর ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৫ মিটার সেতু নির্মাণ করার জন্য নাভানা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ ফেলে প্রতিষ্ঠানটি চলে যায়। ২০২১ সালে পুনরায় দরপত্র দেওয়া হয়। এবার সেতুর সঙ্গে ভায়াডাক্ট যুক্ত করে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়। ২৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটার সেতু ও ২২২ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়ায় পাশাপাশি চলতি বছরের ৯ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হলেও প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সেতুর নির্মাণকাজ করছেন আব্দুল ওয়াহাব মাদবর নামের এক ব্যবসায়ী।
কাজের সর্বশেষ পারিস্থিতি জানতে আব্দুল ওয়াহাব মাদবরের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বেইলি সেতুর সঙ্গে বাল্কহেডের ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শরীয়তপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় জনসাধারণের চলাচলের স্বার্থে আমরা একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে দিচ্ছিলাম। আজ বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুর একটি স্প্যান ভেঙে পড়েছে। সেতুর নির্মাণকাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন স্প্যান ভেঙে পড়ায় সেতুটি চালু করতে আরও ৩-৪ মাস সময় বেশি লাগবে।’