বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২২ পিএম
অরুন মিয়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে হত্যার পর ৯ টুকরা করে ইট দিয়ে পলিথিনে পেঁচিয়ে পাশের বাড়িতে সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখার চার দিন পর লাশ উদ্ধার করেছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ। নিহত অরুণ মিয়া বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়ার সুরুজ বেপারীর ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোমেনা বেগম, ছেলে রাসেল ও মেয়ে লাকীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, অরুণ মিয়া প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৩৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন একই গ্রামে মোমেনা বেগমকে। ২০১৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চরম আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে অরুণ মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান রুবেলের কাছে ঢাকায় চলে যান। এদিকে অরুণ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান দুবাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা যান। দেশে এনে তার লাশ দাফন করা হয়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করেন এক লাখ তিরিশ হাজার টাকা। পরবর্তীকালে অরুণ মিয়া জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেন। এসব নিয়ে স্ত্রী মোমেনার সঙ্গে অরুণ মিয়ার আবার কলহ হয়।
অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা সাত বছর আমার কাছে ছিলেন। কিছুদিন আগে আমার প্রতিবেশী চাচারা কলহ মিটমাট করে দেন। আমার বাবা গ্রামে এসে ছোট মায়ের সঙ্গে আবার বসবাস শুরু করেন। ক’দিন ধরে আমি ফোনে বাবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি। ফলে গত রবিবার আমি বাড়িতে আসি এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি বাবার সন্ধান চেয়ে।
প্রতিবেশী কুদ্দুস মিয়া বলেন, গত শুক্রবার আমার সাথে অরুণ মিয়া নামাজ পড়েছেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার স্ত্রী আমাদের বলেছেন, শুক্রবার সকালে অরুণ মিয়া ঢাকা গিয়েছেন। কিন্তু আমাদের সন্দেহ হয়। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমরা মনিরের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ পাই। আমরা টর্চলাইট দিয়ে ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা দেখতে পাই। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে সেপটিক ট্যাংকের পানি সেচে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ৯ টুকরো লাশ উদ্ধার করে। এটা অরুণ মিয়ার লাশ বলে তার ছেলে শনাক্ত করেন।
এরপর পুলিশ সন্দেহবশত অরুণ মিয়ার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী মোমেনা হত্যার দায় স্বীকার করেন বলে পুলিশের ভাষ্য। পুলিশ বলছে, গত শুক্রবার বিকালে অরুণ মিয়ার সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মোমেনার কলহ হয়। একপর্যায়ে শাবল দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করেন মোমেনা। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান। পরে স্বামীর লাশ নিজেই ৯ টুকরা করে পলিথিনে পেঁচিয়ে ইট দিয়ে ভারী করে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন মোমেনা।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন চন্দ্র পাল জানান, পারিবারিক কলহের জেরে অরুণ মিয়াকে মাথায় আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। মোমেনা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাশ ৯ টুকরো করেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর সঙ্গে তার সন্তানরাও জড়িত কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেনি পুলিশ।