শারদীয় দুর্গাপূজা
হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৪ পিএম
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩৪ পিএম
প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। সম্প্রতি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার তারটিয়া পালপাড়া এলাকা। প্রবা ফটো
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে
শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের
দুর্গাপূজা। এর আগে ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের
শিল্পীরা। হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রঙ-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরি দিয়ে গড়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে।
এ ছাড়া কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পীরা। হাসিমুখে প্রতিমা
গড়ার কাজ করলেও তারা জানিয়েছেন বিষাদের কথা। কারণ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেজায়
চড়া। ফলে প্রতিমা তৈরি করে আর লাভ হচ্ছে না তাদের।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল
সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের তারটিয়া পালপাড়ায় দেখা যায়, প্রতিমা শিল্পীদের কেউ প্রতিমা
তৈরিতে আবার কেউবা রঙ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। দিনরাত
সময় ব্যয় করছেন তারা। প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, আগের চেয়ে কাজ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায়
বাড়েনি পারিশ্রমিক। এ ছাড়া প্রতিমা তৈরির উপকরণের দামও চড়া। উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত এঁটেল
মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশ কিনতে গত বারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম দিতে হয়েছে।
শিল্পী সুমন পাল
বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে
পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গত বছর ১০টা মণ্ডপের কাজ করেছি। এবার
ছয়টি বানিয়েছি। মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতেই এখন কাজ করে যাচ্ছি
আরকি।’
তিনি আরও বলেন,
‘অনেকে এবার পূজা করছে না। আয়োজকদেরও আগ্রহ নষ্ট হয়েছে, আমাদেরও নষ্ট হয়েছে। বাজেটও
কমে গেছে। কাজ করে বেঁচে থাকাই কষ্টের। প্রথমে কাজ না পেলেও শেষের দিকে চাপ বেড়েছে।
কোনো জায়গায় যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রশাসনের কাছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
চাই।’
প্রতিমা শিল্পী
গোবিন্দ পাল বলেন, ‘দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছি। মাটি দিয়ে প্রতিমা
তৈরির কাজ শেষ করেছি। রঙের কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমাগুলোকে অলংকার দিয়ে সাজিয়ে
পূজারিদের বুঝিয়ে দিয়ে দেব। আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতাম, এখন তা ৫০০- ৬৫০ টাকায়
কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত, এখন পাঁচ থেকে
ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে
খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা, তা এখন খরচ হয় এক লাখ টাকার ওপরে। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা
প্রণামী পাচ্ছি না।’
সন্তোষ পাল নামে
আরেকজন বলেন, ‘বংশপরম্পরায় আমি মৃৎশিল্পের কারিগর। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজও তেমন
পারি না। বছরের এই সময়ে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর বাকি সময় টুকটাক কাজ করি। সবকিছুর
দাম এখন বেশি। তা ছাড়া অনেকে এখন মেশিন দিয়ে কাজ করে। তিনজন মজুরের জায়গায় দুজন লাগে।
এজন্য কম বেতন হলেও কাজ করা লাগে। নয়তো অন্য কোনো উপায় নেই।’
তিনি আরও বলেন,
‘গত বছর প্রতিমা ১২টি তৈরি করেছিলাম। যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটা
এবার ২৫ হাজার। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতাম, সেটা এখন ২০০-২৫০ টাকা। সেই হারে পারিশ্রমিক
যদি বাড়ত, তাহলে পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করতে হতো না।’
কারিগর সজীব পাল
বলেন, ‘প্রতিমার কাজ শেষ করেছি চার দিন হলো। এখন চলছে রঙ ও সাজসজ্জার কাজ। অনেকে তাদের
পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রঙ-বেরঙের শাড়ি, অলংকার ও মাথার মুকুট
দিয়ে গেছে। আমরা এখন আস্তে আস্তে সেগুলোর কাজ করতেছি। প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম
বেড়েছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত ৫০ কেজির এক বস্তা মাটির দাম দুই হাজার টাকা, সঙ্গে
পরিবহন খরচ আছে। সে অনুযায়ী আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।’
জেলা পূজা উদযাপন
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ গুণ ঝন্টু বলেন, ‘ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন কমিটি ও সর্বদলীয়
লোকদের সঙ্গে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সভা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের
দুর্গা উৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে আশা করি। আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সারা
দেশে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। কতিপয় দুষ্কৃতকারী আমাদের কিছুটা ক্ষতি করার চেষ্টা
করছে।’
পুলিশ সুপার সাইফুল
ইসলাম সানতু বলেন, ‘পূজা উপলক্ষে পুলিশ সুপারের অফিসে কন্ট্রোল রুম করতে যাচ্ছি। ১২৫
জনের মতো স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে
থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও পুলিশের
একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে।’
তিনি আরও বলেন,
‘আমরা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করব। ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে
পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। আশা করি,
জেলায় শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন হবে।’