× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উত্তরে বন্যা

‘বন্যায় হামার সউগ শ্যাষ হয়া গেইচে’

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৬ পিএম

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:১৫ এএম

‘বন্যায় হামার সউগ শ্যাষ হয়া গেইচে’

তিস্তাপাড়ে বাড়ি কুমো বালার (৫৬)। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে গেছে তার। গ্রামরক্ষার বালুর বাঁধে অস্থায়ী ঘর করে আশ্রয় নিয়েছেন। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁধ দিয়েছেন চরবাসী। পানি না নামা পর্যন্ত বাঁধই তাদের শেষ ঠিকানা।

ঘরের সামনে বসে আছেন কুমো বালা। এরই মধ্যে লুঙ্গি ও শার্ট পরে গলায় গামছা ঝুলিয়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন উপেন্দ্র নাথ। গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ কুড়িবিষ্যা জোগকামরা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক উপেন্দ্র নাথ। তিনি কুমো বালার বেয়াই। বাড়ির সামনে আসতেই কুমো বালা অস্থায়ী ঘর থেকে চেয়ার বের করে তাকে বসতে দিলেন। বন্যায় মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি ডুবে গেছে। তারা কী অবস্থায় রয়েছে, তাই দেখতে এসেছেন উপেন্দ্র। সঙ্গে একবেলার খাবার নিয়ে এসেছেন। চেয়ারে বসে খাবারগুলো বের করছিলেন। বন্যায় কেমন আছে তারাÑ এমন প্রশ্ন করতেই উপেন্দ্র নাথ বলেন, কৃষক মানুষ হামরা। বন্যায় তো হামার সউগ শ্যাষ হয়া গেইচে। এটে বেটি বেঁচে খাইছি (এখানে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি), বন্যায় ওমার ঘরবাড়ি ডুবি গেইচে। অ্যালা বাপ হয়া তো দেকা নাগবে। সেই জন্তে বেটির বাড়িত আসনু। অ্যালা খালি হাতে তো আসা যায় না। বেটি-জামাইয়ের জন্তে অল্প কিছু ভাত ধরি আসনু। মুইও গরিব। বেটি-জামাইও গরিব। তেমন তরকারি নিবার পাও নাই। ডাইল, আলু ভাজি আর ভাত ধরি আসনু। 

তিনি আরও বলেন, হামার কষ্টের তো শ্যাষ নেই। মোর বাড়িও নদীর পাড়োত। প্রত্যেকবার বাড়ি ভাঙ্গি, আরেকটি করি। জন্ম থ্যাকি দেখি আসতোছি নদীত বাড়ি, আবাদি জমি ভাঙ্গতোছে, অ্যালাও ভাঙ্গে। যতদিন বাঁচি থাকমো, ততদিন নদীত ভাসমো, নদী বাড়ি ভাঙ্গি নিয়া যাইবে। কায়ো তো হামার জন্তে কোনো কাম করে না। 

কুমো বালা বলেন, দুই দিন থ্যাকি বন্যার পানিত বাড়ি ডুবি আছে। জেবন রক্ষাত হামরা বান্দের (বাঁধে) পাড়োত ঘর করি আছি। এটে গরু, ছাগল, ভেড়া, বকরি সউগ ধরি থাকা নাগে। হামার তো কোনোটে যাবার জায়গা নাই। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এক্কেবারে বাড়ির কাছোত চলি আসছে। এমন করি নদী ভাঙ্গতে থাকলে চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত আর থাকা যাবার নায়।  

কুমো বালার স্বামী জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, এত সাংবাদিক ছবি তুলি টিপিত দেখায়, পত্রিকাত লেখে, তাও সরকার কিছুই দেকে না। হামরা বান্দ চাই, নদী খনন চাই। কত কনু, কিছুই হইল না। এই জন্তে এইগল্যা চাওয়াই বন্ধ করছি। 

তিনি বলেন, বর্ষা প্রায় শ্যাষ হওয়ার নাগচে। এইবার কমপক্ষে ২০ থ্যাকি ২৫ বার বাড়িত পানি উঠিল। মোর ১৭ থ্যাকি ১৮ বিঘা জমি আছিল। নদী ভাঙ্গি সউগ শ্যাষ। অ্যালা ৮ থ্যাকি ১০ বিঘা জমি আছে, সেইটাও নদীত ডুবি আছে। পানি কমলে সেইগুলাও ভাঙ্গি যাইবে।

বন্যায় রংপুর ছাড়াও লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চলের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত উভয় অঞ্চলে বিপুল বৃষ্টির কারণে নদ-নদীতে বাড়ছে পানি। ভারতে তিস্তার ওপর গজলডোবা বাঁধের সব কপাট খুলে দেওয়ায় পানি বাড়ছে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের নিম্নাঞ্চলে।

রংপুরে নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ৫০টির অধিক বাড়ি। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। জেলায় গত তিন দিনে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছর পঞ্চম দফার এই বন্যায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ১৫৯ হেক্টর জমির আমন ও চিনাবাদাম নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় গত চার দিনে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধি পেলেও বন্যার আশঙ্কা নেই। আজ (রবিবার) থেকে পানি কমতে শুরু করবে। 

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বড়হাট পাথরঘাটা নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো ভারী বর্ষণে ভেঙে গেছে। এতে নদীর দুই পারের প্রায় ১০ গ্রামের হাজারো মানুষের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। সেই সঙ্গে প্রবল স্রোতে নদীপাড়ের রাস্তা, ফসল ও কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 

বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন বলেন, আনুমানিক দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকোটি নির্মিত। এ সাঁকো দিয়ে প্রায় ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সাঁকো দিয়ে সিপাইদিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাথরঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। তিন দিনের টানা বর্ষণে নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় সাঁকোটি ভেঙে গেছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা কম

আশার কথা শুনিয়েছেন রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগ ও এর উজানে ভারতে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তার পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিনে তা হ্রাস পেতে পারে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমারও একই আশার কথা বলেছেন। আর কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলছেন, ‘পানি বৃদ্ধি পেলেও বন্যার আশঙ্কা নেই। আজ (রবিবার) থেকে পানি কমতে শুরু করবে।’

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে রংপুর অফিস, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর প্রতিবেদক)

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা