বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৯ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:১০ পিএম
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ)
রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত ঋণের অর্থছাড় ও ঠিকাদার নিয়োগে ভারতীয়
কর্তৃপক্ষের তরফে সাড়া মিলছে না। ফলে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা
তৈরি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ঋণের অর্থে
নির্মাণাধীন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পে কর্মরত সেই দেশটির কর্মীরা নিজ দেশে
ফিরে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পকে ঘিরে ওই অনিশ্চয়তা দেখা
দিয়েছে।
বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায়
এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে বর্তমানে রাজধানী ঢাকা যেতে হলে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার
ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরপথে চলাচল করতে হচ্ছে। বাড়তি ওই পথ
ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি বেশি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। বগুড়া থেকে
যেখানে সড়কপথে ঢাকা পৌঁছাতে লাগে সাত ঘণ্টা সেখানে ট্রেনে ঘুরপথে যেতে লাগে ১০
থেকে ১১ ঘণ্টা। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র
৭৩ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায়
ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব।
রেলওয়ের তথ্যমতে, গুরুত্বপূর্ণ ওই প্রকল্পটি ২০১৮
সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদিত
হয়। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ বা
৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেবে ভারত। শুরুতে প্রকল্পটির
নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ
এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২০২১ সালের ২৭
সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর তারা ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত
নকশা প্রণয়ন করে। এরপর ২০২৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ
রেলপথ নির্মাণের জন্য বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এর মধ্যে বগুড়া জেলা সীমানায় ৪৭৯ দশমিক ১৫ একর এবং বাদবাকি ৪২০ দশমিক ৬৮ একর
অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলা সীমানায়। ভূমি অধিগ্রহণ খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য
প্রকল্পে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এরপর প্রকল্পের জন্য
প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবসংবলিত ৪ ধারার নোটিস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে
ভূমিমালিকদের কাছে পাঠানো হয়।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সিরাজগঞ্জ এগিয়ে, পিছিয়ে
বগুড়া
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের
প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন ওই রেলপথ নির্মাণের জন্য
দুই জেলার মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা সীমানায় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
ওই জেলার জেলা প্রশাসনের অধীন ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তার কার্যালয় জমিমালিকদের ৪
ধারার নোটিসপরবর্তী যৌথ তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে তাদের প্রতিবেদন ভূমি
মন্ত্রণালয়ে জমাও দিয়েছে। তবে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল
কর্মকর্তার কার্যালয় তাদের যৌথ তদন্ত এখনও শেষ করতে পারেনি। ফলে জমি অধিগ্রহণের
জন্য পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম তারা শুরু করতে পারছে না। বগুড়ার পিছিয়ে থাকার জন্য
তারা ভূমি হুকুম দখল কার্যালয়ের সার্ভেয়ারদের গাফিলতিকে দায়ী করেছে।
বগুড়ায় ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিলম্বিত হওয়ার
কারণ সম্পর্কে স্থানীয় ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াজেদ জানান, সিরাজগঞ্জে
মোট ৩৭টি মৌজার ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আর বগুড়ায় অধিগ্রহণ করা হবে ৫৬টি মৌজার
জমি আর ভূমির পরিমাণও বেশি। তিনি বলেন, শুধু মৌজা এবং ভূমির পরিমাণই বেশি নয়।
বগুড়ায় প্রস্তাবিত জমিগুলোতে অনেক স্থাপনা রয়েছে। মাত্র চারজন সার্ভেয়ার দিয়ে
সেগুলো পরিমাপের পাশাপাশি স্থাপনাগুলোর বিবরণ নেওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। এরই মধ্যে
আমরা ৫১টি মৌজার যৌথ তদন্ত শেষ করেছি। বাকি পাঁচটি মৌজার কাজ এক মাসে শেষ করা
সম্ভব হবে। তার পরপরই চূড়ান্ত অধিগ্রহণের জন্য ৭ ও ৮ ধারার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের
নির্মাণকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী
বলেন, ‘প্রকল্পের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এজন্য গত বছরের
অক্টোবরে ঠিকাদারের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জবাব
পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আশাবাদী, ঋণছাড় হলেই ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে
পারে।’