গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৫ পিএম
গোয়ালন্দে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে পদ্মার মোড় এলাকায় ময়লার স্তূপ। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ঘেঁষে পদ্মার মোড় নামক এলাকায় ময়লার স্তূপে ছোট ছোট টিলার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহাসড়কের এক পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ওই স্থানের সামনে মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে চলাচলরত মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য, কৃষিসহ আশপাশের প্রাণ-প্রকৃতি।
গোয়ালন্দ পৌরসভার স্থায়ী ডাম্পিং ব্যবস্থার কাজ শেষ না হওয়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে পদ্মার মোড় এলাকায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন গোয়ালন্দ বাজার, বাসস্ট্যান্ড, পৌর জামতলা বাজার থেকে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা রাতে এবং খুব ভোরে ময়লাগুলো মহাসড়কে এনে ফেলে। এতে করে এলাকার পরিবেশদূষণসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলরত লোকজন ময়লাযুক্ত স্থানে আসার আগেই নাক-মুখ ঢেকে পার হচ্ছে। বেশ কয়েকজন পথচারী চলাচলের সময় রুমাল অথবা নিজের গায়ের কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন শেখ বলেন, ‘মহাসড়ক দিয়ে গোয়ালন্দ বাজার বা অন্য কোনো স্থানে যাওয়ার জন্য ময়লার স্থানে আসার আগেই নাক, মুখ আটকিয়ে যেতে হয়। এখান দিয়ে যাতায়াত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পৌরসভার এদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি।’ বেপারীপাড়ার বাসিন্দা শাহিন বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে ময়লার পরিমাণ বেড়েই চলছে। দুর্গন্ধে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করাই কষ্ট।’
রিকশাচালক মোবারক সরদার বলেন, ‘মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঘাটে অন্তত ৫-৮ বার ভাড়া নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। মাঝেমধ্যে চলাচলের সময় দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। দিনে দিনে ময়লার পরিমাণ বেড়েই চলছে। মহাসড়কের এই স্থানটি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। তাই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ময়লা অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ফরহাদ শেখ বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে এখান দিয়ে যাতায়াত করাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অনেকে এমন দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পৌরসভার সব বর্জ্য বা ময়লা ফাঁকা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা উচিত। মানুষের সমস্যা তৈরি করে কোনো সেবা না করাই ভালো।’
পত্রিকা বিক্রেতা কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘পত্রিকা নিয়ে যাওয়ার সময় ময়লার গন্ধে আমার বমি চলে আসে। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই কষ্ট।’ সুমন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘গোয়ালন্দ বাজার ও পৌর এলাকায় পত্রিকা সরবরাহ করি। পত্রিকা দেওয়ার সময় এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। তখন গন্ধে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়। এটার সমাধান তাড়াতাড়ি করা দরকার, তা না হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।’
ময়লার স্তূপের মাইল দেড়েক পরেই সরকারি ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সজিব, সোহাগ, আছমা, সুমাইয়া, কাইছার, আলমাছ, মেধা, এনায়েতসহ কয়েকজন বলে, যখন স্কুলে যাওয়া-আসা করি তখন ময়লার গন্ধে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ব। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দ্রুত এখানকার ময়লা অপসারণ করা হোক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ছড়ায়। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকে চলাচলরত মানুষের।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকন উজ্জামান বলেন, ‘ময়লার স্তূপ থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান বৃষ্টি বা অন্য কোনো মাধ্যমে পানির সঙ্গে মিশে খালে-নদীতে গিয়ে মেশে। সেই পানি সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে।’
পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন কুটিন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য উজানচর নতুনপাড়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশনের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে দুর্ভোগের অবসান হবে।’
পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জোতিশ্বর পাল বলেন, ‘ময়লা ফেলানোর বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’