সাইফুল ইসলাম সায়েম, নারায়ণগঞ্জ (শহর)
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম
নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকার শ্রী শ্রী বলদেব জিউর আখড়া মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর। শনিবার তোলা। প্রবা ফটো
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। দিনরাত পরিশ্রম করে শিল্পীরা তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় কাদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি ও রঙতুলি দিয়ে তৈরি করছেন একেকটি প্রতিমা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপ প্রাঙ্গণে নানা আকার আর ঢঙের দেবী দুর্গার প্রতিমা বানানো হচ্ছে। জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সব মিলিয়ে ২১৩ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। এর আগে আগামী ২ অক্টোবর বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে শহরের দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, উকিলপাড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটি, নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ। ইতোমধ্যেই খড় আর কাদামাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমার কাজ। এখন চলছে রঙ আর তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজানোর কাজ। এ ছাড়াও প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি মণ্ডপের সাজসজ্জায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি।
প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবীদুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে সকাল থেকে শুরু করে দিনরাত চলছে তাদের পরিশ্রম। তবে প্রতিমা নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে বলে আশঙ্কা কারিগরদের। শিল্পীরা বলেন, তাড়াতাড়ি কীভাবে কাজ শেষ করা যায়, সেজন্য রাতদিন পরিশ্রম করছি। সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের লাভ হয় না।
মৃৎশিল্পী তারক নাথ বলেন, গত বছর পূজার প্রতিমার বাজেট ছিল ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ বছর তা অনেক কমে গেছে। আর আমাদের পরিশ্রম বেড়ে গেছে। এখন তারকাঁটা থেকে শুরু করে বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড়ের দাম অনেক বাড়তি। তাই খরচ বেশি পড়ছে। খরচের তুলনায় দুর্গা প্রতিমার মায়ের প্রণামী পাচ্ছি না। এরপরও পেশা ধরে রেখেছি। এখন মাটির ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এর পরে রঙের কাজ করা হবে। আশা করছি, পুজোর দুই দিন আগেই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে দিতে পারব। সময় ঘনিয়ে আসায় কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে। যার কারণে সারাদিন কাজ করার পরে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, এ বছর নারায়ণগঞ্জের ২১৩টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ সমস্ত দল আমাদের পাশে আছেন। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করব। প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গা উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতীতেও যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল তার চেয়ে বেশি আছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকবে। মণ্ডপের বাইরে ও রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্য, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।