রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:২৯ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:১৮ পিএম
তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অন্তত ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রবা ফটো
উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে ৫০টিরও অধিক বাড়ি। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে চরবাসীর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতে অতি ভারী বৃষ্টিসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাতে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বেলা ৩টায় এ পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে উজানের ঢল তীব্র হওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে হু হু করে পানি ঢুকে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায়। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লহ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া এসব এলাকার আগাম আমন ধান, বাদাম, মরিচের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ।
গঙ্গাচড়া উপজেলার চর শংকরদহের দুলালী বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে নদীত পানি বাড়াতে হামার ঘরে পানি উঠছে। এ্যালা বাড়ির সবাই বান্দোত প্লাস্টিকের ছাউনিয়া দিয়া আইতোত (রাতে) থাকি। সব সময় ভয় নাগে কখন যে পানি বাড়ি বান্দোও ভাঙি যায়।’
এলাকার আনসার আলী বলেন, ‘যাওয়ার তো কোনোটে জায়গা নাই। বাড়ির সউগ কিছু চকি তুলছি। পানি তাও বাড়তোছে। ক্ষ্যাতোত ধানের শীষ আসছিল। সেই ধানগুলোও নদীত ভাসি গেইল। এ্যালা সারা বছর হামরা কি খায়া থাকমো সেই চিন্তা করতোছি।’
টেপামধুপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুরের মজিদ মিয়া বলেন, ‘ক্ষ্যাতের ধান, বাদাম, পুকুরের মাছ সউগ নদী চলি গেইছে। বাড়িতও পানি উঠছে। কখন যে নদীর পানিত ঘরবাড়ি ভাসি যায়। হামরা ম্যালা আতঙ্কে আছি।’
কাউনিয়ার টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার তীব্র স্রোতে আমার এলাকার ১০টি ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। আরও ১১টি ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিস্তার বন্যায় বর্তমানে ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যার কারণে বাদাম, মরিচ ও আগাম ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।’
লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে ভাঙন ঠেকাতে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। বন্যা স্থায়ী হলে পানিবন্দি পরিবারকে উদ্ধার করে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হবে। আমি সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের অবস্থার তথ্য প্রশাসনকে জানাচ্ছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগ ও এর উজান ভারতে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিনে তা হ্রাস পেতে পারে।’