নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৪২ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৬ পিএম
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের কেশুড়বাগ গ্রাম থেকে তোলা। প্রবা ফটো
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় শ্বশুর বাড়ির বিল থেকে মিজানুর রহমান মহিনের (৫০) মরদেহ উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে একটি গ্রাম। এতে করে ওইসব বাড়ির পরিবারগুলোর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা।
জানা গেছে, নিহত মিজানুর রহমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর গ্রামের হামিদ মুহুরীর বাড়িতে বিয়ে করেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে গত শুক্রবার তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেশুরবাগ এলাকার কাজী বাড়ির পূর্ব পাশের বিল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের স্ত্রী মালেকা বেগম ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় প্রতিহিংসা বশত আসামি করায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া পুরুষরা।
স্থানীয়রা জানান, নিহত মিজানুর শ্বশুর বাড়ির এলাকার লিনা আক্তারের (৪০) কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। ধারের টাকা পরিশোধ না করায় গত ২০ সেপ্টেম্বর রিনা আক্তার ও তার দুই ছেলে রিদি হোসেন (২২) ও মাহি হোসেন (২২) তাকে মারধর করে। সে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করলে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন সেখানে আসে। তারপর কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মিজানুর রহমান মহিনের আর খবর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি কচুরিপানায় আটকে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
লিনা আক্তারের শ্বাশুড়ি কমলা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বউয়ের কাছ থেকে কৌশলে মিজানুর রহমান মহিন আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। সেদিন সে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। সে দেড় লাখ টাকা খেয়েছে আর কাদেরকে এক লাখ টাকা দিয়েছে। সে সব টাকা দিয়ে দিবেও বলেছে। সেসময় মইনের বউ, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, শালারা ছিল। আমাদের বাড়ির কেউ সেখানে ছিল না। কেউ এটার সঙ্গে জড়িত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নাতি রিদি হোসেন ও মাহি হোসেনের সঙ্গে মইনের তর্কাতর্কিতে সে ঘর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যাওয়ায় জন্য ডোবায় লাফ দেয়। দুইদিন পর মরদেহ ভেসে উঠে। আমাদের বাড়ির কোনো ছেলে পুরুষ এ ঘটনায় জড়িত নয়। তারপরও তাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার ঘরবাড়িতে হামলা করা হচ্ছে। আমি ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’
লিনা আক্তারের জ্যা শাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমার চেইন ও আমার শ্বাশুড়ির চেইন নিয়ে গিয়ে আমার জ্যা লিনা আক্তার ওই মিজানুর রহমান মহিনের হাতে দিয়েছে। মূলত মইন ফুসলিয়ে আমার জ্যায়ের কাছ থেকে এগুলোসহ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। এইসব তার স্ত্রী মালেকা বেগম বিউটি জানে। তারপরও তারা আরমানসহ অন্যান্যদের আসামি করেছে। আরমানসহ বাড়ির কেউ সেখানে ছিল না। হয়রানি বন্ধ করে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাসান বলেন, ‘আমরা চোর চোর চিৎকার শুনে ঘরে থেকে বের হয়ে দেখি কেউ নাই। আমরা আবার শুয়ে পড়ি। কিন্তু নিহত শ্যালক জাভেদ, ফয়সাল ও রাব্বি আমাকে মারধর করেছে। আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না, বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা কাজী আবুল খায়ের বলেন, ‘মামলায় নামে বেনামে আসামি করায় আমাদের সন্তানেরা এলাকা ছাড়া। অথচ বাড়ির কোনো ছেলে সেখানে ছিল না। আমরা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। যারা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি চাই।’
বাড়িঘরে হামলা ও মারধরের বিষয়ে জানতে নিহতের শ্যালক জাভেদ হোসেনের মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নিহতের স্ত্রী মালেকা বেগমকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি অসুস্থ থাকায় কথা বলতে পারেননি৷ তার ছোট ভাই ফয়সাল বলেন, ‘দুলাভাইকে তারা কয়েক দফায় মারধর করেছে। তারপর তাকে কাজী বাড়িতে নিয়েও মারধর করা হয়েছে। আমাদেরকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বললে আমরা সেখানে যাই। তারা ভাইকে হত্যা করে লাশ গোপন করে রেখেছে। যা পরবর্তীতে ভেসে উঠেছে।’
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক বলেন, ‘কারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তা জানতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। কেউ যেন হয়রানি না হয় সেজন্য আমরা তদন্ত করছি। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’