প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪১ পিএম
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্রবা ফটো
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় নদীটিতে তিন ফুট পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে রংপুরেও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ অঞ্চলে নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে শনিবার পদ্মার পানি কমেছে।
লালমনিরহাটে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
লালমনিরহাট প্রতিবেদক জানান, উজানের ঢল ও টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার পানি প্রায় তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও নদীভাঙনে নতুন করে আতঙ্কে পড়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮-১০টি চর, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার ১০-১৫টি চর এলাকায় পানি উঠতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে টানা বর্ষণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার কিছু কিছু এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি উঠে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপপ্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।’
নদীগর্ভে থাকা ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, ‘তার ইউনিয়নের ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড একেবারেই প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষ।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তার নিম্নাঞ্চলের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে ওইসব এলাকার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া ত্রাণ ও সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই
রংপুর অফিস জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গতকাল শনিবার তিস্তা নদীর পানি দিনভর ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ভারতে অতিভারী বৃষ্টি ও উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় তীব্র স্রোতে তিস্তা নদীর পানি ঢুকছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা নিয়ে আগাম সতর্কীকরণ তথ্য পৌঁছানোর কারণে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের মানুষেরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নদীর পানি বৃদ্ধিতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন দিন ধরে পদ্মা নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীটিতে পানি কমেছে ২২ সেন্টিমিটার। এতে করে নদীর তীরবর্তী মানুষের বন্যা আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। তবে কৃষকের নিম্নাঞ্চলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে পানিতে। পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘গত সাত দিন ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ে। এতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়। বর্তমানে অনেক পরিমাণে পানি কমেছে। এখন আর বন্যা আতঙ্ক নেই।’
ওই এলাকারই সানাউল্লাহ নামে এক কৃষক বলেন, ‘সপ্তাহদুয়েক আগে জমিগুলোয় মাষকলাই বীজ বুনেছিল কৃষকরা। তারপরই জমিগুলো নদীতে ডুবে যায়। ফলে মাষকলাইয়ের সঙ্গে অনেক পেঁয়াজ, তিল, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়।’ ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুরের কিছু কিছু এলাকার প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ডুবে যায়। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে মাষকলাইয়ের।’
মাগুরায় পৌরসভার চেষ্টায় জলাবদ্ধতায় সুফল মিলছে
মাগুরা প্রতিবেদক জানান, মাগুরায় গত কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে পৌরসভার চেষ্টায় শহরের কোথাও এখন বেঁধে নেই পানি। এতে শহরের জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে।
জেলায় গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনের একটানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে আবাসিক এলাকার বাসিন্দাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ অফিস। এ ছাড়া ভোগান্তির মধ্যে পড়ে শহরের সাধারণ মানুষ।
তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারে পানি বাড়ছে
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগ ও তার কাছাকাছি উজানে অতিভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতলে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং জেলাসমূহের সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল এবং কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, টাঙ্গন, পূণর্ভবা, ইছামতি-যমুনা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী এক দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে।’
সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের করতোয়া, আত্রাই, বাঙ্গালী, ছোট যমুনা নদীসমূহের পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন নদীসমূহের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের মুহরী, গোমতী, ফেনী নদীসমূহের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।’
৬ বিভাগে বৃষ্টির আভাস
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।