সাভার (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১৭ পিএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:২২ পিএম
কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে হত্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ডেকে এনে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আশুলিয়া থানা বিএনপির সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম পিয়ার আলীর বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী। এদিকে থানায় সাত দিন ঘুরলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। আলামত সংগ্রহ না করে উল্টো নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম পিয়ার আলী আশুলিয়া ধামসোনা ইউনিয়নের পবনারটেক এলাকার মৃত কাশেম আলীর ছেলে। তিনি বিএনপির আশুলিয়া থানা কমিটির সহসভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী।
অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ওই নেত্রীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন বিএনপি নেতা পিয়ার আলী। এ সময় নেত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় নাম দেওয়ার হুমকি দেন। হুমকির মুখে সপরিবারে বাসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু মোবাইলে ফোন দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। দেখা না করায় নেত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকি দিতে থাকেন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে দশটার দিকে দেখা করার জন্য ভাদাইল পিয়ারআলী স্কুলের ভেতরে বিএনপি নেতার ব্যক্তিগত অফিসে যান। এ সময় কৌশলে মুখ চেপে ধরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তাকে।
ভুক্তভোগী যুব মহিলা লীগের নেত্রী বলেন, আমি আগে আওয়ামী যুব মহিলা লীগের একটি পদে ছিলাম। সরকার পতনের পর সবার নামে মামলা হচ্ছে, বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকার এক বিএনপি নেতা আমাকে দেখা করতে খবর পাঠান। কিন্তু আমি না যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের বিরক্ত করা শুরু করেন। তাই বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাই।
তিনি আরও বলেন, এলাকা থেকে চলে আসার পর আমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে জানান আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে হত্যা মামলা হচ্ছে। তাই দ্রুত দেখা করতে বলেন। তার কথামতো একটি স্কুলের ব্যক্তিগত অফিসে দেখা করি। সেখানে আমার মুখ চেপে ধর্ষণ করেন এবং এ ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দেন তিনি।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঘটনার দিনই থানায় মামলার জন্য যাই, কিন্তু ওসি স্যার তদন্ত করে মামলা নেওয়ার কথা বলেন। তিন দিন পার হলেও তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যায়নি কেউ। আমি থানায় বারবার আসায় তিন দিন পর বাধ্য হয়ে থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ছাড়া সাত দিন ঘুরেও মামলা না নেওয়ায় আমি কোর্টে যাই এবং সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম পিয়ার আলী বলেন, ‘আমি তাকে ডেকে আনিনি। সে নিজে থেকে আমার অফিসে এসেছে। সে তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। মামলা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, তাই মামলা থেকে বাঁচতে আমার কাছে আসছিল।’
তাকে ধর্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ, দীর্ঘ সময় ধরে আশুলিয়া ছিলাম না। তার সঙ্গে ভালো পরিচয় নেই। তবে তাকে চিনি। তাকে পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আর কিছু না।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মজিবুর রহমান জানান, এখানে ভিকটিম যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে অভিযুক্ত ঘটনার সময় নিয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে। তাই অভিযোগ পাওয়ার পর দুজনের মোবাইল নম্বর প্রযুক্তির সহযোগিতায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর মামলা নেওয়ার বিষয় ওসি স্যারের, আমার কিছুই করার নেই। আমরা কোনো আলামত নষ্ট করেনি।
এ বিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বক্করের সঙ্গে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।