সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৮ পিএম
কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম জোরদারভাবে চলছে। বিশেষ করে আসন্ন দুর্গাপূজা, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের মধ্যে স্বস্তি আনতে সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে। সেনা সদস্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ও আস্থা ফিরে আসছে। কয়েক দিন আগে যেসব অপরাধীকে প্রকাশ্যে দেখা যেত, তারা গা-ঢাকা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনা সদস্যদের নানা তৎপরতায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন থানায় আগের মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশের কার্যক্রম শতভাগ শুরু হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ও বেশ উন্নত হয়েছে বলে জানান সাধারণ মানুষ। সাবেক ব্যাংকার দেবরাজ রায় বলেন, একটি অস্বস্তি ও অনিরাপদ অবস্থা বিরাজমান ছিল। ছিল নানা গুজব, রিউমার। মানুষকে বিভ্রান্ত করার নানা অপপ্রয়াস। সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করার পর সেই সুবিধাবাদীরা পালিয়ে গেছে। দিন দিন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। ছোটখাটো চুরি-ছিনতাই উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। কিশোরগঞ্জ পৌরবাসী জানান, মানুষ আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। পৌর শহরে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রেখে ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করছেন।
জেলা সদরের কলাপাড়া গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. ইব্রাহীম জানান, ১৫ দিন আগেও অটোরিকশা নিয়ে বের হতে ভয় পেতাম। এখন সেনা সদস্যদের উপস্থিতি থাকায় কোনো ভয়-বাধা কাজ করে না।
সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. রিয়াজুল হক বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। এরই ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জের সর্বত্র অপরাধ নির্মূলসহ যুবসমাজকে মাদকমুক্ত করার অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা অপরাধী শনাক্ত ও আটকের কাজ করছে। সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, পূজাসহ শহরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনা সহায়তায় পুলিশ কাজ করছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি শতভাগ উন্নত হবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি।
হাওরের মিঠামইন, ইটনা, নিকলী, অষ্টগ্রাম উপজেলার নদীগুলোতে স্পিডবোটে সেনা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। মেঘনা, ঘোড়াউত্রাসহ সবকটি নদীতে স্পিডবোটে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। টহল থেকে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে লুটপাট করা মালামাল ফেরত দেওয়ার কথা বলার পর অনেকেই দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর মাইকিং অনুরোধ ইতিবাচক কাজ করেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
হাওরের বাসিন্দারা জানান, সেনাবাহিনীর সহায়তায় জেলার হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলোয় ফিরেছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। হাওরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ভয় ও আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষজন ফিরছে স্বাভাবিক জীবনে। বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কর্মব্যস্ততা।
সেনা টহল বাড়ায় স্বাভাবিক ও উচ্ছ্বাসময় পরিবেশে রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও। হাওর এলাকার বেশ কিছু মন্দির, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে জনজীবনে এমন স্বাভাবিক চিত্রই চোখে পড়েছে। পুলিশ জানায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্পিডবোটে হাওর ও নদীতে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ সময় মাইকে জনগণকে কোনো ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানাতে শোনা যায়। একই সঙ্গে দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারীদেরও সতর্ক করা হয়।
মিঠামইন উপজেলা সদরে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেনা সদস্যরা খোঁজখবর নেন। তা ছাড়া কয়েকটি মন্দিরে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকেও অভয় দেন তারা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে পুলিশের কার্যক্রমে গতি এসেছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
হাওরে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিনহাজের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ১৫ আরই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও করিমগঞ্জের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় হাওরের চারটি থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে ১৩টি থানায় পুরোপুরি স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম থানায় গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। সেখানে সেনা সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় লোকজনও নানা ধরনের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসছেন। মিঠামইন থানার ওসি আহসান হাবিব, ইটনা থানার ওসি জাকির রব্বানি, অষ্টগ্রাম থানার ওসি শফিকুল ইসলাম ও করিমগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তারা কোনো প্রকার সমস্যা দেখছেন না।
কিশোরগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ম ম জুয়েল বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন মানুষ ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারছে। দিন দিন অবস্থা আরও ভালো হবে।