মো. নূর-ই-আলম চঞ্চল, শেরপুর
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:০২ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪ পিএম
অভিযুক্ত মো. মজিবুর রহমান।
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সীমান্ত মডেল কলেজের সাবেক সভাপতি মো. মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতার দাপটে কলেজটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা অঙ্কের নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন মজিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদে ভাই-বোনসহ ৯ জনকে নিয়োগ ও জোরপূর্বক নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলামকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে নিয়ে ভারুয়া গ্রামে সীমান্ত মডেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে সময় মো. মজিবুর রহমান তার এক একর জমি ৬ লাখ টাকায় কলেজের নামে লিখে দেন। একই সঙ্গে তিনি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। পাশাপাশি এক ভাই ও এক বোনসহ তিনজনের চাকরির ব্যবস্থা করেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে তিনি সভাপতির পদে বহাল থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করার নামে এবং শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাবদ হাতিয়ে নেন ৪৫ লাখ টাকা।
সভাপতির এসব অনৈতিক কাজে কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলাম প্রতিবাদ করেন।
ফলে ২০২৩ সালের ২৫ জুন তিনি অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে কলেজ থেকে
বের করে দেন। এর আগে ২০২৩ সালের ২১ জুন কলেজের প্রভাষক ও কর্মচারীদের জিম্মি করে চাকরির
হুমকি দিয়ে অধ্যক্ষ মো. শাহিনুর ইসলামের বিরুদ্ধে মনগড়া নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে
অনাস্থাপত্রে স্বাক্ষর নেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে
উপজেলা, জেলা ও ব্যানবেজে পাঠানো ২০ জন শিক্ষক কর্মচারীর নাম ও পদবি ঠিক থাকলেও ২০২৩
সালে ২৩ জন শিক্ষক কর্মচারীর নাম ব্যানবেজে পাঠানো হয়। এতে আগের ছয়জন শিক্ষক-কর্মচারীকে
বাদ দিয়ে সভাপতির এক ভাই, এক বোন, মেয়ের জামাই, পুত্রা ও ভাগিনাসহ ৯ জনকে যুক্ত করে
শিক্ষক কর্মচারীর ব্যানবেজ জরিপে পাঠানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বঞ্চিত শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
এদিকে সভাপতির মেয়ের জামাই অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম কলেজের কোনো দায়িত্ব
পালন না করে গত ৬-৭ বছর সিঙ্গাপুরে চাকরি করছেন। আরেক মেয়ের জামাই প্রধান অফিস সহকারী
মুক্তার হোসেন অফিস না করে ব্যক্তিগত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। সভাপতির ছোট ভাই ও
অফিস সহকারী আতিকুর রহমান মুদি দোকান পরিচালনায় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে সভাপতি মো. মজিবুর
রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগ বাণিজ্যের ফলে একদিকে কলেজটির দাপ্তরিক কার্যক্রম যেমন
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মজিবুর রহমানের স্ব-পদে থাকার যোগ্যতা
না থাকায় এবং তার সকল অপরাধ ঢেকে রাখার জন্যে কলেজের ছাত্রী এবং তার মেয়ে ফেরদৌসীকে
গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত করেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ বাতিল করে। এতে
ভেস্তে যায় সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমানের সকল স্বপ্ন।
মজিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। অপরদিকে মুহাম্মদ
শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালে অত্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। সে সময় থেকেই কলেজের
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে বিধি মোতাবেক দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। কিন্তু সাবেক
সভাপতি মজিবুর রহমান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তার নিকটতম আত্মীয় ও এনটিআরসির ভুয়া নিবন্ধনধারী মুন্নাছ
আলীকে অধ্যক্ষ বানানোর আশ্বাসে ১৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর
নিয়ে আমাকে কলেজ থেকে বের করে দেন। পাশাপাশি আমার নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীনভাবে
অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে মিথ্যাচার করেন। পুরোটাই
তার সাজানো নাটক।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অত্র কলেজের সভাপতি মো. আশরাফুল
আলম রাসেল এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা সত্যতা নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।