মাগুরা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৬ পিএম
মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশমুখে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। প্রবা ফটো
মাগুড়ায় গত ১৫ দিনের মধ্যে ৯ দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে শহরের অধিকাংশ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জনগুরুত্বপূর্ণ অফিস, স্কুল কলেজসহ শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডের রাস্তায়। জলাবদ্ধতার কারণে মাছ চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। পৌরসভার মূল ড্রেন পরিস্কার করলেও কমছেনা আশানুরূপ পানি। পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের কলেজ রোডে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে এবং চত্বরে জমেছে আছে পানি। অফিসের কর্মচারী এবং সেবা প্রত্যাশীরা ময়লা পানিতে পা ভিজিয়ে যাচ্ছেন অফিসে। একই অবস্থা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অতি বৃষ্টিতে জমে থাকা বদ্ধ ময়লা পানি দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলেছে।
ভোগান্তির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত কলেজ পাড়া, জেলা পাড়া, দোয়ার পাড়সহ স্টেডিয়াম পাড়া। যেখানে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ৮০ ভাগ রাস্তা। ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়ছে পানি। এসব এলাকার তলিয়ে যাওয়া রাস্তার খানাখন্দের কারণে চলাফেরায় বেড়েছে ঝুঁকি। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রিকশা চালকরা ভাড়ায় যাচ্ছেন না এসব এলাকায়।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করতে না পারলেও জেলা মৎস্য বিভাগ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬শ মৎস্য চাষীর ৩৯০ হেক্টর জমিতে ৩৫টি ঘের এবং ৪শ ৪৫টি পুকুর ও দীঘির মাছ ভেসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিবৃষ্টিতে মাছের ঘের থেকে ৯৯.৫০ টন সাদা মাছ ভেসে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। একইসঙ্গে ১ কোটি ৫১ লাখ পিস মাছের পোনা ভেসে যায়। যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ লাখ টাকা। এছাড়াও অবকাঠামো গত ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পৌরসভার তথ্যসূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত পৌরসভার ৯টা ওয়ার্ডের সমন্বয়ে তিন শ্রেণির রাস্তা আছে ৫শ ৮ কি.মি.। ড্রেন করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৬৫ কি.মি.। যার মধ্যে পাকা এবং আরসিসি ড্রেন করা হয়েছে ১২.৬৫ কি.মি.। বাকি ১৮ কি.মি. কাঁচা এবং প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া। যা অতিবৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য অপর্যাপ্ত।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটা অনুমোদন হলেই জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কাজ করবে পৌরসভা।
মাগুরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারী বলেন, ‘জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। অপেক্ষা করছি একনেক সভায় অনুমোদনের। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর ভোগান্তি দূর হবে।’
মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল কাদের প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে অফিসে আসা-যাওয়া করতেও রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পানি নিষ্কাশন না করা হলে এ জলবদ্ধতা থেকে সহজেই মুক্তি মিলবে না। আমি মাগুরা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি। পৌরসভার সব কাজের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে সুপরিকল্পিত কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা আমার কাজের মূল লক্ষ্য। আশা করি এ কাজের মধ্য দিয়ে পৌরসভার নাগরিকরা স্থায়ীভাবে উপকৃত হবেন।’