× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র লোহাহীন শতবর্ষী কাঠের মসজিদ

গাজী মাসুদ রানা, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৪ এএম

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৭ এএম

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে শতবর্ষী কাঠের মসজিদ। প্রবা ফটো

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে শতবর্ষী কাঠের মসজিদ। প্রবা ফটো

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে আছে মুসলিম স্থাপত্যকলার নিদর্শন দৃষ্টিনন্দন শতবর্ষী কাঠের মসজিদ। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য এটি তৈরিতে ব্যবহার হয়নি কোনো লোহা। যা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ। নাম মমিন মসজিদ। 

মমিন উদ্দিন আকন নামের স্থানীয় একজনের উদ্যোগে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব শৈল্পিক ভাবনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি মসজিদটি তৈরি করেন, যা শিল্পকর্মের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে আজও। বিচিত্র কারুকাজখচিত সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি এই মসজিদ স্থানীয়ভাবে ‘কাঠ মসজিদ’ নামে পরিচিত। ইতিহাসের নিদর্শন এ মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯১৩ সালে কাঠ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাঠশিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা থেকে হরকুমার নাথকে মাসিক ৪০ টাকা বেতনে মসজিদ তৈরির প্রধান মিস্ত্রি নিয়োগ করেন মমিন উদ্দিন। ২২ জন মিস্ত্রি দীর্ঘ সাত বছরের নিরলস পরিশ্রম শেষে ১৯২০ সালে শেষ হয় মসজিদের নির্মাণকাজ। মমিন উদ্দিন আকন সব সময় মিস্ত্রিদের কাছে থেকে কাজ তদারকি এবং কারুকাজগুলো সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখতেন।

সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত। সময়ের ধারাবাহিকতায় নামমাত্র কিছু কাঠ বা রঙের ক্ষতি হলেও পরবর্তী সময়ে মেরামত করে সৌন্দর্য ধরে রাখা হয়েছে।

নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়েছে দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান কাঠ। যে কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে মিয়ানমার, ত্রিপুরা ও আসাম থেকে। এর কাঠামো তৈরিতে লোহার পেরেক ব্যবহার না করে কাঠের শলা ব্যবহার করা হয়। ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের মসজিদটিতে চৌচালা টিন শেড দিয়ে পাটাতন তৈরি হয়েছে। ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাটাতনের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয় আর একটি দোচালা টিনের ছাউনি। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে জানালা। পূর্ব দিকে একটি মাত্র প্রবেশদ্বারে কারুকার্যখচিত দুটি খাম্বাবিশিষ্ট দরজা রয়েছে, যাতে মসজিদ নির্মাণের সূক্ষ্ম শিল্পকর্ম ফুটে উঠেছে।

মসজিদে একসঙ্গে ৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের বর্তমান ইমাম নাঈম হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে থেকে এই মসজিদে নামাজ পড়াচ্ছি। সৌন্দর্যের কারণে প্রায় প্রতিদিন এটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসেন। 

মমিন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মমিন উদ্দিন আকনের নাতি আবুল কালাম আজাদ জানান, ইউনিসেফ প্রকাশিত বিশ্বের অনন্য মসজিদ নিয়ে প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে এ কাঠ মসজিদটির সচিত্র বর্ণনা স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের মধ্যে শুধু এটির আলোকচিত্র ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় জাদুঘরের স্থাপত্য গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া এটি রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে দাবি জানাই।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক গোলাম ফেরদৌস বলেন, ২০০৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্বীকৃতি পায় মসজিদটি। দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া আছে। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ থাকলে আমাদের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করতে সুবিধা হতো। পাঠ্যপুস্তকে মসজিদটি অন্তর্ভুক্ত করা গেলে নতুন প্রজন্ম এর ইতিহাস জানতে পারবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা