নোয়াখালী ও বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৩২ পিএম
ভারতের যারা আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল তারা ইলিশ চাচ্ছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভেঙে যাওয়া মুছাপুর রেগুলেটর পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই দাবি করেন।
রিজওয়ানা বলেন, যারা এই ইলিশ চাচ্ছে, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ওই পার থেকে অনেক সমর্থন দিয়েছে। সেটি আমরা সবাই দেখেছি। তিনি বলেন, ইলিশ রপ্তানি করা হবে। রপ্তানির টাকা বাংলাদেশ পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা না। তিনি বোঝাতে চাইছেন বাংলাদেশ ভারতকে ইলিশ মাছ উপহার দিচ্ছে না, রপ্তানি করছে।
বালুদস্যুতা ও লবণাক্ততা
পরিদর্শন শেষে তিনি বালুদস্যুতা সম্পর্কে বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন জাতীয় দস্যুতায় পরিণত হয়েছে। যেখানেই নদীতে বালু আছে, সেখানেই জেলা প্রশাসকরা মানুষের শত আপত্তি সত্ত্বেও রাজস্ব আয়ের কথা চিন্তা করে বালুমহাল ঘোষণা করে দেয়। বালুমহাল ঘোষণার যেমন সুযোগ আছে, তেমনি বিলুপ্তিরও সুযোগ আছে। বালু উত্তোলনের মাধ্যমে নদীর ড্রেজিং কি বালু ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দেব নাকি সরকারিভাবে ড্রেজিং করা হবে তা আমাদের ভাবার সময় এসেছে।
উপদেষ্টা আরও জানান, তার মুছাপুর নদীর পাড়ে আসার কারণ হচ্ছে, সমস্যাটা সরকারের চশমা দিয়ে না দেখে মানুষের চশমা দিয়ে দেখা। মানুষ আর সরকার ভিন্ন সত্ত্বা হলে পরিবর্তন হবে না। মানুষকে আর সরকারকে এক জায়গায় এসে সমস্যার সমাধানে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা নদী-তীরবর্তী এলাকায় এসে স্থানীয় মানুষের কথা শুনলাম। সরকারি হিসাবমতে, প্রতিবছর নদীভাঙনে ৩০ হাজার মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। যেটি বেসরকারি হিসাবে এক লাখের বেশি।’
লোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে মুছাপুর রেগুলেটর লাগবে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, রেগুলেটর দিনে দিনে তৈরি করা সম্ভব না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। আমরা যদি দ্রুতগতিতেও রেগুলেটর নির্মাণ করতে চাই, তাও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা
নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, দখলকারীদের তালিকা আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের সব নদী দখলমুক্ত করতে দুই মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের। জনগণের সহযোগিতায় নদী, খাল ও জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে।
সোমবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গোমতী নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ভারতের কাছ থেকে বন্যা ও বৃষ্টিপাতের তথ্য চাওয়া হবে। পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু কখন গেট খোলা হবেÑ তা জানাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ভারত ছাড়াও নদীভিত্তিক অন্যান্য দেশকে নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঁইয়া, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমীর ফয়সাল উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।